যে ৬ খাবারে শিশুর ঘুমের সমস্যার সমাধান হবে।
আজ আমরা যে ৬ খাবারে শিশুদের ঘুমের সমস্যা দূর হবে তা নিয়ে আলোচনা করবো। সাধারণত দু বছরের পর হতে শিশুরা স্বাভাবিক খাবার খেতে পারে। এই বয়সের শিশুদের নিয়ে অনেক বাবা মায়ের অভিযোগ- শিশু রাতে ঘুমাতে চায় না, চিল্লাফাল্লা করে এবং পরিবারের বাকি সদস্যদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
কিন্তু ঘুম শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।। তাদের দুর্বল স্বাস্থ্যের পেছনে অন্যতম ওকটি কারণ হলো পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া। অনেক শিশু দিনে বেশি ঘুমায় আর রাত প্রায় নির্ঘুম কাটায়, মূলত তাদের নিয়েই যত সমস্যা। আসুন জেনে নেই যে ৬ খাবারে শিশির ঘুমের সমস্যা দূর হবে।
যে ৬ খাবারে শিশুর ঘুমের সমস্যা দূর হবে:
১. কলা:
কলাতে ট্রিপটোফ্যান এবং ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে যা ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে। কলার মধ্যে উপস্থিত কিছু বিশেষ উপাদান সেরোটোনিন এবং মেলাটোনিন ক্ষরণে সাহায্য করে। যার ফলে শিশুদের তাড়াতাড়ি ঘুম আসে।
শুধু তাই নয়, এতে থাকা বেশ কিছু খনিজ উপাদানের তাদের শরীর রিলাক্স করতে সাহায্য করে। ফলে তাদের অনিদ্রার সমস্যা দূর হয়। তাই ঘুমের সমস্যা দূর করতে আজ থেকেই সন্তানকে রোজ একটা করে কলা খাওয়ান।
শিশু যদি কলা খেতে পছন্দ না করে তাহলে ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার পালং শাক এবং বাদাম খাওয়াতে পারেন।
২. দুধ:
এক গ্লাস গরম দুধ আপনার শিশুর ঘুমের সমস্যা দূর করতে বেশ কার্যকরী ভুমিকা রাখবে। দুধে থাকে ট্রিপটোফ্যান, এটি একটি অ্যামিনো অ্যাসিড যা সেরোটোনিন এবং মেলাটোনিন উৎপাদনে সাহায্য করে । তাই শিশু সময়মত ঘুমাতে না চাইলে গরম দুধ খাওয়ান।
৩.মিষ্টি আলু:
মিষ্টি আলু বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার, যা চোখের জ্যোতি বাড়াতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এর পাশাপাশি মিষ্টি আলুতে উপস্থিত খনিজ এবং ভিটামিনের গুণে শরীর রিলাক্স হয়।
আর শরীর রিলাক্স থাকলে খুব সহজেই ঘুম চলে আসে। তাই বিশেষজ্ঞরা শিশুদের ঘুমের সমস্যায় নিয়মিত মিষ্টি আলু খাওয়ার পরামর্শ দেন।
৪. ডিম:
শিশুর ঘুমের সমস্যা সমাধানে নিয়মিত ডিম খাওয়ান। ডিমে উপস্থিত ট্রিপটোফ্যান অ্যামাইনো এসিড শরীরে সেরোটোনিন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যা শিশুর স্লিপ সাইকেল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
৫. ওটস:
শিশুদের জন্য ওটস একটি চমতকার খাবার। ওটস খেলে শরীরে মেলাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়বে। যার ফলে শুয়ে পড়লে সাথেসাথে ঘুম চলে আসে। এটি শিশুর কোয়ালিটি ঘুম এর পাশাপাশি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং এনার্জি বাড়ানোতে দারুণ ভূমিকা রাখে। তাই শিশুর ঘুম সাইকেল সচল রাখতে ডায়েটে ওটস রাখতে পারেন।
৬. মাছ:
আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি হলেও এখনকার শিশুরা মাছ খেতে চায় না। মাছ হলো প্রোটিনের ভাণ্ডার। প্রোটিন শিশুর পেশি গঠনে সাহায্য করে। তাছাড়া, মাছে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু খনিজ এবং ভিটামিনের গুণে শিশুদের ঘুমের সমস্যা দূর হয়।
চিকিতসকের পরামর্শ:
ছোট শিশুদের ঘুমের নির্দিষ্ট কোন টাইম নাই। সব শিশুই প্রয়োজনমতো একটু একটু করে ঘুমিয়ে নেয়। তাই ওরা যতক্ষণ ঘুমাতে চায়, ঘুমাতে দিন। শিশুর পেটে কোন কারণে ব্যথা হলে তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
পেটব্যথা বা ইনফেনটাইল কলিকের শিকার হলে শিশুরা সারারাত কান্নাকাটি করতে পারে। কিছু টেকনিক অবলম্বন করলে শিশু দিন ও রাতের পার্থক্য টা দ্রুত বুঝতে পেরে দিনে জেগে থেকে রাতে ঘুমাতে শুরু করবে।
কী করবেন?
উক্ত সমস্যা কাটাতে দিনের বেলায় ঘরে উজ্জ্বল আলো জ্বালিয়ে রাখুন। তাদের সঙ্গে কথা বলুন, দিনে যাতে অতিরিক্ত না ঘমায় সেজন্য তাদের সজাগ রাখতে চেষ্টা করুন। এজন্য মিউজিক ও টিভিও চালাতে পারেন।
দিনের বেলায় শিশু দুই তিন বারে দেড় দুই ঘণ্টার মতো ঘুম দিতে পারে। কিন্তু সন্ধ্যা ৬টার পর হতে ১০ টা পর্যন্ত শিশু যেন না ঘুমায়, সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। এ সময় তাদের কে বিভিন্ন খেলার সামগ্রী বা পুতুল দিয়ে ব্যস্ত রাখুন। শিশু যেন দুধ খেতে খেতে ঘুমিয়ে না পড়ে মা-বাবা কে সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
সন্ধ্যার পর কুসুম গরম পানি দিয়ে শরীর মুছে দিলে তারা ফ্রেশ অনুভব করবে, এতে ঘুমাবেও কম। তবে রাত ৮-৯টার পর থেকেই শিশুর ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করুন। ঘুমিয়ে গেলে রুমের সব বাতি নিভিয়ে দিন।
রাতে ঘুমের আগে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে চেষ্টা করুন। এরপর শিশু না ঘুমাতে চাইলেও তাকে বিছানায় রাখুন। ঘুম পাড়াতে শিশুকে মজার ছড়া, গান বা গল্প শোনাতে পারেন।
শিশু ঘুমের মধ্যে আতকে উঠে কেনো?
অনেক সময় শিশু ঘুমের মধ্যে আতকে উঠে, মনে হয় যেনো ঘুমের মধ্যে কিছু দেখে ভয় পেয়েছে। অনেক সময় হটাত কেদে উঠে, এবং তার শরীর ঘেমে উঠে। ঘুমের মধ্যে আতকে উঠার এই সমস্যাটি অনেক ক্ষেত্রেই সেইসব শিশুদের হয়, যাদের পরিবারের সদস্যদেরও ঘুমের সমস্যা থাকে।
এই ঘুমের মধ্যে ভীতি (Sleep Terror) এর সমস্যা টি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঘুমের ২ থেকে ৩ ঘণ্টা পরে দেখা যায়। অনেকটা দুঃস্বপ্নের (Nightmare) মতো মনে হয়।
সাধারণত ঘুমিয়ে যাবার পরে, যখন শিশু ঘুমের দ্বিতীয়-তৃতীয় স্তরে পৌছে যায়, তখন কেন্দ্রীয় নার্ভাল সিস্টেম এর কিছু ব্যাঘাতের কারণে ওরা ঘুমের মধ্যে হটাত আতকে উঠে।
তাছাড়া বাচ্চার শারীরিক ক্লান্তি বা কোনো ওষুধের পার্শপ্রতিক্রিয়াও রাতের এই হটাত আতকে উঠার কারণ হতে পারে। তাছাড়া জ্বর বা শরীরের উচ্চ তাপমাত্রাও এই সমস্যার কারণ হতে পারে।
পোস্টট্যাগ: যে ৬ খাবারে শিশুর ঘুমের সমস্যার সমাধান হবে, শিশুরও ঘুমের সমস্যা হয়, শিশুর ঘুমের সমস্যার কারণ ও করনীয়, বয়স অনুযায়ী শিশুর ঘুমের তালিকা, নবজাতকের ঘুম বেশি হওয়ার কারণ, নবজাতকের ঘুম কম হলে করণীয়, বাচ্চা রাতে না ঘুমালে দোয়া, বাচ্চা না ঘুমালে কি করনীয়, বাচ্চা ঘুমের মধ্যে চমকে উঠে কেন, শিশু কেনো ঘুমায় না, শিশুর কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত, শিশুর কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত, শিশুর ঘুমের সমস্যা কাটাতে কি করনীয়, শিশু কেনো ঘুমাতে চায় না কি করনীয়, শিশুর ঘুমের সমস্যা; অভিভাবক এর করনীয়, শিশু না ঘুমালে কি করবেন, শিশুর ঘুমের সমস্যা
শেষকথা:
আশা করি যে ৬ খাবারে শিশুর ঘুমের সমস্যা দূর হবে তা বুঝতে পেরেছেন। এরকম স্বাস্থ্য বার্তা নিয়মিত পেতে আমাদের ওয়াবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করুন।
বন্ধুমহল আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url