সুস্থ্য সবল দেহ গঠনে চিয়া সিডের ভুমিকা-চিয়া সিডের ১০ টি উপকারিতা।

বন্ধুরা আজ আমরা সুস্থ্য সবল দেহ গঠনে চিয়া সিডের ভুমিকা নিয়ে আলোচনা করা হবে। চিয়া আমরা অনেকেই চিয়া সিড এর নাম শুনেছি, কিন্তু অনেকেই চিয়া সিড এর স্বাস্থ্য উপকারীতাগুলো কি কি তা জানি না।

চিয়া সিড এর স্বাস্থ্য উপকারীতাগুলো কি কি তা জানলে আপনি সত্যিই অবাক হবেন। আমরা এই আর্টিকেলে চিয়া সিড এর উপকারীতা ও অপকারীতা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তাই আসুন চিয়া সিড এর উপকারীতা ও অপকারীতা গুলো কি কি তা জেনে নেই।

আমি নিশ্চিত চিয়া সিড এর স্বাস্থ্য উপকারীতা কি কি তা জানলে আপনি এটি গ্রহণ করতে চাইবেন। কারণ বিশ্বব্যাপী এটি একটি জনপ্রিয় সুপার ফুড যা মানুষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। 


চিয়া সিড কি-What is Chia seed?

চিয়া সিড বাংলাদেশে একেবারেই নতুন। চিয়া সিডের জন্ম মূলত সুদূর মেক্সিকোতে। স্থানীয় “Salvia hispanica” নামক পুদিনা প্রজাতির একটি গাছের বীজ হলো চিয়া সিড।


প্রাচীন অ্যাজটেক ও মেসোআমেরিকান সংস্কৃতিতে চিয়া সিড(Chia Seed) একটি গুরুত্বপুর্ণ ফসল ছিলো। সরিষার দানার মতো দেখতে ছোট, সাদা, ধূসর, বাদামী ও কালো রঙের এই বীজটি পুষ্টিগুণে এবং নানানরকম ঔষধিগুণে অনন্য।

সুস্থ্য সবল দেহ গঠনে চিয়া সিডের ভুমিকা-চিয়া সিডের উপকারিতা--চিয়া সিডের ১০ টি উপকারিতা।


চিয়া সীডের পুষ্টিগুণ- Nutrition value of Chia Seed

চিয়া সিড এর পুষ্টিগুণ অনেক। পুষ্টিবিদদের মতে চিয়া সিডে-

**দুধের চেয়ে ৫ গুণ বেশী ক্যালসিয়াম

**কমলার চেয়ে ৭ গুণ বেশি ভিটামিন সি

**পালং শাকের চেয়ে ৩ গুণ বেশী আয়রন

**কলার চেয়ে দ্বিগুণ পটাশিয়াম

**স্যামন মাছের থেকে ৮ গুণ বেশী ওমেগা-৩ রয়েছে


সুপার ফুড কি- What is super food?

সাধারণত যেসব উদ্ভিজ্জ খাদ্য পুষ্টিগুণে ঠাসা থাকে এবং আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপযোগী, এইসব খাদ্যকে সুপার ফুড বলা হয়। প্রাচীনকালে চিয়া সিড মানুষের প্রধান খাদ্য হিসাবে জায়গা পেলেও আধুনিককালে খুব অল্প কয়েকবছর হল চিয়া সিড ‘সুপার ফুড’ পরিচিতি পেয়েছে।


সারা বিশ্বে গত কয়েক বছরে Chia Seed এর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠেছে। এখন সারা পৃথিবীরই স্বাস্থ্য সচেতন মানুষরা এটা নিয়মিত খাচ্ছেন। বাংলাদেশেও এই সুপার ফুডের জনপ্রিয়তা এখন আকাশচুম্বী। 


চিয়া সিড এর ১০ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা: 10 Health benefits of Chia Seed

চিয়া সিড এর স্বাস্থ্য উপকারিতা বলে শেষ করা যাবেনা। অনেকে চিয়া সিড এর নাম শুনলেও এর উপকারিতা সম্পর্কে জানেন না। তাদের জন্য চিয়া সিড এর ১০ টি উপকারিতা জানানো হলো-


১. শারীরিক শক্তি বৃদ্ধিতে: চিয়া সিডে প্রাকৃতিকভাবে মানব দেহের উপকারী অনেক খনিজ উপাদান এবং ভিটামিন থাকে। যা শরীরে শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। চিয়া সিড খেলে অনেক বেশি পরিশ্রম করলেও শরীরে তেমন ক্লান্তি আসেনা।


২. ওজন হ্রাস: চিয়া সিডে ফাইভার থাকে প্রচুর। তাছাড়া চিয়া খেলে খিদা লাগে কম। তাই বাড়তি খাওয়া হয় না। যার কারণে চিয়া সিড ওজন কমাতে দারুণ ভুমিকা রাখে। ওজন দ্রুত কমাতে চাইলে সকালে খালি পেটে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ২ চা চামচ চিয়া সিড পানিতে আধাঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে সাথে পরিমাণ মতো লেবুর রস মিশিয়ে খাবেন। 


৩. হাড় শক্তিশালীকরণ: আমরা জানি ক্যালসিয়াম  হাড়কে শক্তিশালী করে। চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকে। যা হাড়ের গঠন মজবুত করতে সহায়তা করে। তাছাড়া এটি শরীরের জয়েন্ট ব্যথা ও হাঁটুর ব্যথা নিরাময়ে কাজ করে থাকে। 


৪. ডায়াবেটিস নিরাময়ে: চিয়া সিডে এমন অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে যা ডায়াবেটিস রোগীদের সুস্থ্য রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করে ইনসুলিন তৈরিতে সাহায্য করে। যার কারণে শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাছাড়া চিয়া সিড খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।


৫. ক্যান্সার প্রতিরোধে: কোলন বা মলাশয় পরিষ্কার রাখে চিয়া সিড। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ফলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। তাছাড়া যেকোন ক্যান্সার প্রতিরোধে চিয়া সিড বেশ কার্যকর। 


৬. হজম শক্তি বাড়াতে: হজম শক্তি বাড়াতে চিয়া মহা উপকারী। এটি শরীর থেকে দূষিত টক্সিন বের করে দেয় এবং খাবার দ্রুত হজমে সহায়তা করে।


৭. কোয়ালিটি ঘুমের জন্য: ভালো ঘুমের জন্য চিয়া সিড অত্যন্ত উপকারী। ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতেও এই বীজ সহায়তা করে। 


৮. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এটি বেশ কার্যকর। এতে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে। যার কারণে এটি প্রদাহ কমাতে বেশ কার্যকরী। সুঠাম দেহ চাইলে নিয়মিত এটি গ্রহণ করা উচিত। 


৯) আইবিএস রোগীদের ক্ষেত্রে: আইবিএস রোগ কমাতে এটি বেশ উপকারী। যারা ক্রনিক আইবিএস এ ভুগছেন তারা নিয়মিত চিয়া সিড খেলে উপকার পাবেন।


১০. হৃদযন্ত্রের সুস্থ্যতায়: চিয়া সিড হৃদযন্ত্র ভালো রাখে। গবেষণা মতে চিয়া সিড রক্তের উপকারী কোলেষ্টেরল(এইচডিএল) বাড়াতে সাহায্য করে এবং ক্ষতিকর কোলেষ্টেরল(এলডিএল) কমাতে সাহা্য্য করে। এলডিএল বাড়লে স্ট্রোক এবং হার্ট এ্যাটাক এর ঝুকি বাড়িয়ে দেয়। চিয়া সিড এই ক্ষতিকর এলডিএল কমিয়ে হৃদরোগের ঝুকি কমাতে সাহায্য করে।


চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম- How to eat Chia Seed?

আপনার পছন্দ অনুযায়ী যে কোন খাবারের সাথে যোগ করে চিয়া সিড গ্রহণ করতে পারেন । সালাদ বা জুসের সাথে যোগ করতে পারেন চিয়া সীড। পানিতে আধাঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে খেতে পারেন।


এছাড়া দই বা মিষ্টি জাতীয় খাবারের সাথে যোগ করে খেতে পারেন। সালাদ, স্যুপ বা সেমাই এর সাথে খেতে পারেন। চাইলে সারাদিনে প্রতি কাপ চায়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়।বাচ্চাদের দৈনিক এক চা চামচ এবং বড়দের জন্য প্রতিদিন ১ টেবিল চামচ বা ৩ চা চামচ চিয়া সিড খেতে পারবেন।


চিয়া সিড কতদিন খাবেন?

চিয়া সিড সবসময় খেতে পারবেন। তবে পুষ্টিবিদদের মতে সপ্তাহে ৩-৪ দিন খেলে চলবে। তবে নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে খেলে কোন সমস্যা হবেনা।


চিয়া সিড দৈনিক কত টুকু খাবেন?

প্রাপ্তবয়স্করা চিয়া সিড দৈনিক ১ টেবিল চামচ বা ৩ চা চামচ পরিমাণ খেতে পারবেন। শিশুরা দৈনিক ১ চা চামচ পরিমাণ খেতে পারবে। 


শিশুরা কি চিয়া সিড খেতে পারবে?

জ্বী, পুষ্টিবিদদের মতে চিয়া সিড শিশুরাও খেতে পারবেন।শিশুদের খাবারের সাথে চিয়া সিড মিশিয়ে খাওয়াতে পারবেন। যেসব বাচ্চারা দুধ খায় তাদের দুধের সাথে চিয়া সিড খাওয়াতে পারবেন। তবে এক বছর বা তার কম বয়সী বাচ্চাদের চিয়া সিড না খাওয়ানোই উত্তম। আধা চা চামচ থেকে সর্বোচ্চ এক চা চামচ চিয়া সিড শিশুদের খাওয়াতে পারবেন বলে মতামত দেন পুষ্টিবিদগণ।


সতর্কতা: 

চিয়া বীজ যেহেতু হাই ফাইবার সমৃদ্ধ তাই বেশি পরিমানে খেলে হজমপ্রক্রিয়ায় সমসা ও দ্রুত ওজন কমে যেতে পারে। চিয়া সিড রক্তচাপ কমাতে পারে, তাউ নিম্ন রক্তচাপের ব্যক্তিদের জন্য বিপদজনক হতে পারে। আপনার যদি নিম্ন রক্তচাপ বা উচ্চ রক্তচাপের জন্য কোন ওষুধ সেবন করেন তবে চিয়া সিড খাওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলে খাওয়া উচিত। চিয়া সিড শুকনো বা পর্যাপ্ত পানি ছাড়া খেলে শ্বাসরোধ এর ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। অতিরিক্ত চিয়া সিড খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে। যাদের চিয়া সিড খেলে অ্যালার্জি দেখা দেয় তাদের এটি বর্জন করা উচিত। তাছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের চিয়া সিড অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত। এবং অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে খাওয়া উচিত।


শেষ কথা

চিয়া সিড একটি সুপার ফুড। চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ এর কথা বলে শেষ করা যাবে না। যারা শারীরিক সুস্থ্যতা নিয়ে চিন্তিত তারা নিশ্চিন্তে চিয়া খেতে পারেন। চেঞ্জটা নিজেই টের পাবেন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বন্ধুমহল আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url