অযুর নিয়ম বা বিধান। অযু নষ্ট হয় যেসব কারণে।

অনেকেই সুন্নাহ পদ্ধতিতে অযু করার নিয়ম কানুন জানতে চান। অযুর নিয়ম কানুন ভালোভাবে না জানলে অযুতে ভুল হতে পারে। আমাদের অনেকের অযু তে ভুলত্রুতি থাকে। তাই আসুন সহী সুন্নাহ পদ্ধতিতে অযুর নিয়ম কানুন সম্পর্কে জেনে নেই।

অযুর নিয়ম কানুন বা অযুর বিধান:

অযু হল ইসলামের বিধান অনুসারে দেহের অঙ্গ-প্রতঙ্গ ধৌত করার মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জনের একটি পন্থা। মুসলমানদের নামাজের পূর্বে অযু করা বাধ্যতামূলক। মুসলমানদের মধ্যে শারীরিক পবিত্রতা লাভের জন্য গোসলের পরে অজুর স্থান। কুরআনে আছে, "নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন। (আল কুরআন ২:২২২)

অযুর নিয়ম কানুন
অযুর নিয়ম কানুন

অযুর নিয়ম কানুন গুলো হলো-

১. মনে মনে পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহ পাকের ইবাদত করার উদ্দেশ্য বা নিয়্যাত করুন।

২. মিসওয়াক, ব্রাশ বা অনুরূপ কিছু দিয়ে দাঁত ও মুখের অভ্যন্তর ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।

৩. “বিসমিল্লাহ” বা “আল্লাহর নামে শুরু করছি” বলুন। ৪. দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত তিন বার ধৌত করুন।

৫. ডান হাতে মুখের মধ্যে পানি দিয়ে তিন বার ভালভাবে কুলি করুন।

৬. ডান হাত দিয়ে নাকের মধ্যে পানি দিন এবং পানি নাকের মধ্যে টেনে নিয়ে বাম হাতের আঙুল দ্বারা নাকের অভ্যন্তর ভালোভাবে পরিষ্কার করুন এবং নাক ঝেড়ে ফেলুন।

৭. কপালের চুলের গোড়া থেকে থুতনির শেষ প্রান্ত পর্যন্ত এবং এক কান থেকে অপর কান পর্যন্ত সম্পূর্ণ মুখমণ্ডল ভালভাবে তিনবার ধুয়ে নিন। দাড়ির ভিতরে আঙুল দিয়ে পানি প্রবেশ করিয়ে নাড়াচাড়া করুন।

৮. কনুই সহ ডান হাত তিন বার ভালোভাবে ধৌত করুন। বাম হাতের আঙুল ডান হাতের আঙুলের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে নাড়াচাড়া করুন।

৯. উপরে উল্লেখিত একই নিয়মে কনুই সহ বাম হাত তিন বার ধুয়ে নিন।

১০. ভিজে হাত দ্বারা সম্পূর্ণ মাথা একবার ভালোভাবে মুছে নিন । দুহাত দিয়ে মাথার সম্মুখভাগ থেকে মাথা মুছতে শুরু করুন। একেবারে ঘাড় পর্যন্ত মোছার পর হাতদুটো আবার আগের স্থানে ফিরিয়ে আনুন। হাতের ভিজে আঙুল দিয়ে কানের ভিতরে ও বাহিরভাগ মুছে নিন।

১১. পায়ের গোড়ালির উপরিভাগ বা টাখনু সহ ডান পা তিনবার পানি দ্বারা ধুয়ে নিন। পায়ের আঙুলের মধ্যে হাতের আঙুল প্রবেশ করিয়ে নাড়াচাড়া করুন যাতে আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে ভালভাবে পানি যেতে পারে।

১২. উপরে উল্লেখিত একই নিয়মে বাম পা তিনবার ধুয়ে নিন। 

১৩. অযুর পরে বলুন:

উচ্চারণ: আশহাদু আল লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া'হদাহু লা- শারীকা লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মু'হাম্মাদান ‘আবদুহু ওয়া রাসূলুহু। আল্লা-হুম্মাজ 'আলনী, মিনাত তাওয়া-বীন, ওয়াজ্ 'আলনী মিনাল মুতাতাহ্ হিরীন।

অর্থ: “আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। এবং সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। “হে আল্লাহ আপনি আমাকে তাওবাকারীগণের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং যারা গুরুত্ব ও পূর্ণতা সহকারে পবিত্রতা অর্জন করেন আমাকে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করুন।”

রাসূলুল্লাহ(সা.) বলেছেন, “যদি কেউ সুন্দরভাবে এবং পরিপূর্ণভাবে অযু করার পর উক্ত যিকর পাঠ করে তাহলে জান্নাতের আটটি দরজাই তাঁর জন্য খুলে দেওয়া হবে, সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা করবে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।”--- সহীহ মুসলিম, হাদীস-২৩৪, সুনান তিরমিযি, হাদীস-৫৫।


অযু ভঙ্গের কারণ ও অযু বিষয়ক ভুলভ্রান্তিঃ


একবার অযু করলে সেই অযু নষ্ট না হওয়া পর্যন্ত একাধিক সালাত আদায় করা যায়। নিম্নের কোন একটি কাজ করলে অযু ভেঙে যাবে বা নষ্ট হয়ে যাবে এবং সালাত আদায়ের জন্য নতুন করে অযু করার দরকার হবে:


১. প্রস্রাব বা পায়খানার পথ দিয়ে কোন কিছু বেরিয়ে আসা। অর্থাৎ এ দু'স্থান থেকে প্রস্রাব, পায়খানা, বীর্য, বায়ু বা অন্য যা কিছুই বের-হোক তাতে অযু ভেঙে যাবে।


২. গভীর ঘুম, যাতে মানুষ নিজের সম্পর্কে স্বাভাবিক অনুভূতি হারিয়ে ফেলে তাতে অযু ভেঙ্গে যাবে। সাধারণভাবে শুয়ে বা হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পরলে অযু নষ্ট হয়। বসে বসে তন্দ্রাভাব হলে অযু নষ্ট হয় না।


৩. জ্ঞান হারানো, পাগলামি, অসুস্থতা, মাদকতা বা অন্য কারণে জ্ঞান হারালে অযু নষ্ট হয়ে যাবে।


৪. ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করা। ঈমান নষ্ট হয় এমন কোন কথা বললে, বিশ্বাস করলে বা ইসলামের মৌলিক কোন বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করলে সে ইসলাম ত্যাগী হিসেবে গণ্য হবে এবং তার অযু ভেঙ্গে যাবে। এমতাবস্থায় তাকে ক্ষমা চেয়ে পুনরায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে হবে এবং সালাতের প্রয়োজনে নতুন করে আবার অযু করতে হবে।


৫. রক্তপাত হলে বা মুখভরে বমি করলে অযু ভেঙ্গে যাবে। সন্দেহ বা ওয়াসওয়াসার জন্য অযু নষ্ট হবে না। 


অনেক মুসলিম অজ্ঞতার কারণে অযুর সময় এমন এমন কিছু কাজ করেন যা রাসূলুল্লাহ(সা.) করেন নি বা তাঁর সুন্নাতের খেলাফ । এতে করে মুমিন সুন্নাত অনুসারে আমলের সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হন বা গোনাহগার হন। যেমন:


১. মুখে নিয়্যাত উচ্চারণ করে পড়া। নিয়্যাত অর্থ ইচ্ছা। মনের মধ্যে ইচ্ছা পোষণ করলেই হয়। মুখে উচ্চারণ অর্থহীন ও সুন্নাতের খেলাফ।


২. অতিরিক্ত পরিমাণে পানি ব্যবহার করা বা পানির অপচয় করা। রাসূলুল্লাহ(সা.) এক সেরের চেয়ে কম পানি দিয়ে অযু করতেন।


৩. অযুর কোন স্থান শুকনো রয়েছে কিনা এ ব্যাপারে সতর্ক না হলে।


৪. ওয়াসওয়াসার কারণে বারবার অযু করা বা অযুর সময় তিনবারের বেশী কোন অঙ্গ ধোয়া।


ইসলামে তায়াম্মুমের বিধান

ইসলামে তায়াম্মুমের বিধান জেনে নিন+

তায়াম্মুম কি?

তায়াম্মুম হলো অযু বা গোসলের পরিবর্তে মাটি বা বালি দিয়ে পবিত্রতা অর্জনের বিকল্প পন্থা। কখনো যদি এমন পরিস্থিতির তৈরী হয় যে- কোনো স্থানে পবিত্রতা অর্জনের জন্য পর্যাপ্ত পানি নেই, কিংবা পানি থাকলেও সেই পানি ব্যবহার ব্যক্তির জন্য ক্ষতিকর হয়—এমন পরিস্থিতিতে ইসলাম কিছু নিয়ম অনুসরণের মাধ্যমে তায়াম্মুম করার অনুমতি দিয়েছে। 


তায়াম্মুম করার নিয়ম বা বিধান

পানি না থাকলে বা পানি ব্যবহারে কোন ক্ষতির আশংকা হলে পবিত্রতার জন্য মাটি ব্যবহার করে তায়াম্মুম করতে হয়। যদি মুসল্লীর কাছে অযুর পানি না থাকে বা পানির মুল্য খুব বেশী হয়, বা পানি সংগ্রহ করতে গেলে বিপদের আশংকা থাকে অথবা পানি ব্যবহার করলে রোগব্যধি হওয়ার বা বৃদ্ধি পাওয়ার নিশ্চিত আশংকা থাকে তাহলে অযু-গোসল উভয়ের পরিবর্তে তায়াম্মুম করতে হবে।


সংক্ষেপে তায়াম্মুম করার নিয়ম হলো মনেমনে নিয়্যাত করে বিসমিল্লাহ বলে দুই হাত মাটি, পাথর, ধুলা বা মাটি জাতীয় কিছুর উপর রাখতে হবে। এরপর দুই হাত দিয়ে সমস্ত মুখে হাত বুলাতে হবে । দ্বিতীয়বার দুই হাত মাটি বা মাটি জাতীর কিছুর উপর রেখে এরপর দুই হাত কনুই পর্যন্ত মুছতে হবে। হাদীস ও ফিকহের গ্রন্থে এই বিষয়ে  বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।


শেষকথা

অযুর নিয়ম কানুন জানা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অবশ্য পালনীয়। কারণ ইবাদতের মধ্যে সর্বোত্তম ইবাদত হলো নামাজ। ইসলামে নামাজের গুরুত্ব অনেক। আর সেই নামাজের পূর্বশর্ত হলো অযু। অযু ছাড়া নামাজ পড়া যায় না। আশা করি ওযুর নিয়ম কানুন ভালোভাবে জানতে এবং বুঝতে পেরেছেন।


কৃতজ্ঞতাঃ

ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙীর(রাহি.)

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বন্ধুমহল আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url