খেজুরের স্বাস্থ্য উপকারীতা কি কি- Health Benefits of Dates

খেজুরের স্বাস্থ্য উপকারীতা

আমরা অনেকে খেজুর খেতে পছন্দ করি, কিন্তু খেজুর খেলে কি কি উপকার হয় তা জানি না। খেজুরের স্বাস্থ্য উপকারীতা জানতে পুরো আর্টিকেল টি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। 


পরিচিতিঃ

খেজুর গাছের আদি জন্মস্থান হলো সৌদি আরব। এই গাছ ১০,০০০ বছরের পুরাতন গাছ। অনেক দেশ বা জাতি, সৌদি আরব থেকে এই গাছ নিয়ে তাদের নিজেদের দেশে চাষ শুরু করেছেন। খেজুর যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিকর।


আমরা জানি ইসলামে অন্যান্য সকল ফল থেকে খেজুরকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআন শরীফে ২৬ বার খেজুরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সূরা মরিয়মে এর উপকারিতার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। মরিয়ম(আ.) যখন প্রসব বেদনায় প্রচন্ড কষ্ট পাচ্ছিলেন তখন তিনি একটি খেজুর গাছের নিচে গিয়ে বসেছিলেন। তিনি গাছকে নড়তে বলেছিলেন এবং গাছ নড়ে যে খেজুর নিচে পড়েছিল তা তিনি খেয়ে ছিলেন এবং এতে তার ব্যথার উপশম হয়েছিল।


বর্তমানেও অধিকাংশ সৌদি নারীরা প্রসব পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে, মরিয়ম(আ.) এর এই উদাহরণটি অনুসরণ করে থাকেন। খেজুর মুলত জরায়ুর মাংসপেশিকে বিভিন্ন উপাদানের যোগান দিয়ে দ্রুত প্রসব হতে সাহায্য করে। এই ফল প্রসব পরবর্তী কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে এবং রক্তক্ষরণ কমিয়ে দেয়।


মা ও শিশুর জন্য খেজুর খুব ভাল এবং পুষ্টিকর একটি খাবার। সৌদি আরবের শিশুরা দুধের পরে যে জিনিসটির স্বাদ নেয় সেটা হল খেজুর। নবীজীর প্রিয় ফল ছিল খেজুর নবীজী মোহাম্মদ (সা:) রমজানের ইফতার সেহেরি তে সকল মুসলমানদেরকে খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার করতে বলেছেন। একদা তিনি বলেছিলেন, যদি কারো বাড়িতে অল্প কিছু খেজুর থাকে, তাহলে তাকে গরিব বলা যাবে না। পবিত্র কোরআন শরীফ প্রথমদিকে লেখা হয়েছিল খেজুর গাছের পাতায়। পবিত্র কোরআন-এ আল্লাহ পাক এরশাদ করেন,


অর্থঃ "আমি জমিনে উৎপন্ন করেছি শস্য-আঙ্গুর, শাকসবজি, জয়তুন ও খেজুর বৃক্ষ।" (সূরা-আবাসা, আয়াতঃ ২৭)


আল্লাহপাক সূরা নাহলো খেজুর ও আঙ্গুরের কথা উল্লেখ করেছেন এইভাবে-


অর্থঃ "খেজুর ও আঙ্গুর ফল থেকে তোমরা সাকার ও উত্তম খাদ্য তৈরি কর। নিঃসন্দেহে বুদ্ধিমান লোকদের জন্য এতে নির্দশন রয়েছে।” (সূরা-নাহল, আয়াতঃ ৬৭)




খেজুরের পুষ্টিগুণঃ

খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং ফাইবার, ক্যালরি, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, এবং ফ্যাট রয়েছে। এছাড়াও এতে ভিটামিন বি৬, ভিটামিন কে, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ এবং আয়রন রয়েছে। এইসব উপাদানের কারণেই খেজুরের স্বাস্থ্য উপকারীতা অনেক।


খেজুরের স্বাস্থ্য উপকারীতাঃ 

বন্ধুরা খেজুরের স্বাস্থ্য উপকারীতা অনেক তা আমরা জানলাম। এখন আমরা জানব খেজুরের স্বাস্থ্য উপকারীতা  কি কি। তাই খেজুরের স্বাস্থ্য উপকারীতা জানতে পুরো আর্টিকেল টি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।


১। আজওয়া খেজুর হৃদরোগের মহৌষধঃ

আজওয়া খেজুর সম্পর্কে হযরত সায়ীদ (রাঃ) বর্ণনা করেন, "একদা আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে রাসূলে পাক (সাঃ) আমাকে দেখতে এলেন। রাসূলে পাক (সাঃ) এর পবিত্র হাতের শীতলতা আমার অন্তর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। অতঃপর রাসূলে আকরাম (সাঃ) এরশাদ ফরমালেন, তুমি অন্তরে কষ্ট অনুভব করছো। তুমি হারেস ইবনে কালদাহ সাকিফীর নিকট যাও। কারণ সে একজন চিকিৎসক। সে যেন মদীনার সাতটি আজওয়া খেজুর নিয়ে বীজসহ পিশে তোমার মুখে ঢেলে দেয়।" (আবু দাউদ, মিশকাত) 

খেজুরের মধ্যে থাকা পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে সাহায্য করে।


২। আজওয়া খেজুর বিষের মহৌষধঃ

এই খেজুর মধ্যম আকৃতিবিশিষ্ট এবং কালচে বর্ণের হয়। এই খেজুর সম্পর্কে রাসূলে পাক (সাঃ) এরশাদ করেছেন-


অর্থঃ "আজওয়া জান্নাতের ফল। এর মধ্যে বিষের নিরাময় রয়েছে।" (তিরমিযী, মিশকাতুল মাসাবীহ)


বুখারী শরীফে বর্ণিত আছে,

অর্থঃ "হযরত সা'আদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলে পাক (রাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে সে দিন বিষ এবং যাদু তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।"-বুখারী শরীফ।


৩। যৌন স্বাস্থ্য উন্নত করেঃ

খেজুর শারীরিক ও মানসিক শক্তিবর্ধক হিসেবে কাজ করে।এবং যৌন শক্তি বর্ধক হিসেবে কাজ করে। খেজুরের সাথে  কালিজিরা ও রসুনের ব্যবহার যৌন শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।


৪। রক্ত উৎপাদনকারীঃ

যারা রক্ত স্বল্পতায় ভুগছেন তারা নিয়মিত খেজুর খেতে পারেন। কারণ এটা রক্ত উৎপাদনকারী। 


৫। হজমে সহায়তা করেঃ

খেজুরের মধ্যে উচ্চ মাত্রায় ফাইবার রয়েছে, যা হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন হজমজনিত সমস্যা যেমন অম্লতা, পেট ফাঁপা কমাতে সহায়ক।


৬। প্রাকৃতিক শর্করার উতসঃ

খেজুরে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক শর্করা যেমন গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ এবং সুক্রোজ থাকে। যার কারণে এটি দ্রুত শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। খেলোয়াড় এবং শ্রমজীবী মানুষের জন্য খেজুর একটি আদর্শ খাবার।


৭। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান

খেজুরের স্বাস্থ্য উপকারীতার আরেকটি দিক হলো খেজুরে পলিফেনলস, ফ্ল্যাভোনয়েডস, এবং ক্যারোটিনয়েডস এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জাতীয় উপাদান থাকে, যা শরীরের কোষগুলোকে রক্ষা করে এবং বিভিন্ন ধরনের দীর্ঘমেয়াদী রোগ যেমন ক্যান্সার, হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।


৮। অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ

খেজুরের মধ্যে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান থাকে যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এটি বিভিন্ন ধরনের প্রদাহজনিত অসুস্থতা যেমন আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি কমায়।


৯। মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নত করে

খেজুরে থাকা বিভিন্ন পুষ্টিগুণ মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়ক। এটি নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ যেমন আলঝাইমার্স এর ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।


১০। হাড়ের স্বাস্থ্য

খেজুরে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকার কারণে হাড়ের গঠন এবং শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক।


১১। রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ

খেজুরে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে, যা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সহায়ক। তাছাড়া এটি রক্তের হিমোগ্লোবিন স্তর বাড়াতে সহায়ক। তাই রক্ত রক্তসল্পতা প্রতিরোধে নিয়মিত খেজুর খান।


১২ ওজন বৃদ্ধি করে

যারা ওজন বাড়াতে চান তাদের জন্য এটি একটি ভালো বিকল্প। খেজুরে উচ্চ পরিমাণে ক্যালরি থাকে, যা ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। 


১৩। ইমিউন সিস্টেম বৃদ্ধি

খেজুরে থাকা ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করতে সাহায্য করে, যা শরীরকে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ এবং রোগ থেকে রক্ষা করে।


১৪। সন্তান জন্মদান প্রক্রিয়া সহজ করেগবেষণায় দেখা গেছে যে , গর্ভাবস্থার শেষের দিকে খেজুর খেলে প্রসব ব্যথা কমে এবং দ্রুততম সময়ে সন্তান জন্মদানে সাহায্য করে।

খেজুরের স্বাস্থ্য উপকারীতা 
শেষ কথাঃ

আশা করি খেজুরের স্বাস্থ্য উপকারীতার কথা জানাতে পেরেছি। তাই খেজুরের স্বাস্থ্য উপকারীতার কথা চিন্তা করে নিয়মিত খেজুর খাওয়া উচিত। তাছাড়া অন্যান্য ফল ফলাদির সাথে তুলনা করলে দেখতে পাবো যে খেজুরের স্বাস্থ্য উপকারীতা অধিক। তাই সুস্থ্য থাকতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে দৈনিক খেজুর খান। কোন মতামত থাকলে কমেন্ট করে জানান।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বন্ধুমহল আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url