সূরা নাস বাংলা অর্থসহ-সূরা নাস এর ফজিলত
সূরা নাস, এ সূরাটি পবিত্র কোরআন মাজীদের ১১৪ তম ও সর্বশেষ সূরা এই সূরাটি ৬ আয়াত বিশিষ্ট এই সূরা অবতীর্ণ হয় মদিনায় তাই এ সূরাটিকে মাদানী সূরা হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করা হয়েছে এই সূরাটি মূলত প্রভুর কাছে বান্দার প্রার্থনামূলক একটি সূরা। শয়তানের অনিষ্টতা থেকে বাকু প্ররোচনা থেকে রক্ষা পেতে সর্বশক্তিমান আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইতে এড়াতে বলা হয়েছে। আল্লাহর কাছে শয়তানের অনিষ্ঠতা থেকে আশ্রয় চাওয়ার জন্য দুটি সূরা রয়েছে সেটি হল সূরা আন নাস ও সূরা আল ফালাক।
সূচিপত্রটি দেখে নিন
সূরা নাস এর নামকরণ
নাচ শব্দের অর্থ হল মানুষ সূরা আন নাস ও সূরা আল ফালাক এ সূরা দুটি যদিও ভিন্ন তবে এদের দুটির মধ্যে খুব গভীর সম্পর্ক রয়েছে সূরা দুটির বিষয়বস্তু কিন্তু একই এবং একই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই সূরা দুটি নাযিল করা হয়েছে আসুন তাহলে ঘটনাগুলো এবার আমরা জেনে আসি।
সূরা নাস বাংলা উচ্চারণ
সূরাহ নাস | উচ্চারণ | অর্থ |
---|---|---|
1.قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ | কুল আ’উযুবিরাব্বিন্না-ছ। | বলুন, আমি আশ্রয় চাইতেছি মানুষের পালনকর্তার নিকট। |
2.مَلِكِ النَّاسِ | মালিকিন্না-ছ | মানুষের অধিপতির নিকট |
3.إِلَـٰهِ النَّاسِ | ইলা-হিন্না-ছ। | মানুষের মাবুদের নিকট |
4.مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ | মিন শাররীল ওয়াছ ওয়া-ছিল খান্না-ছ। | এবং সে সকল অনিষ্ট থেকে যে কুমন্ত্রণা দেয় এবং তা আত্মগোপন করে |
5.الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ | আল্লাযি ইউওয়াছ ইসু ফী সুদুরিন্নাছ-। | এবং যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে |
6.مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ | মিনাল জিন্নাতি ওয়ান্না-ছ। | এবং সে জিনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে |
সূরা নাস এর শানে নুযুল
👉মুসনাদ আহমেদ শরীফের বর্ণিত রয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাম এর উপর এক ইহুদী ব্যক্তি জাদুটনা করেছিল যার ফলে তিনি অনেক শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন এরপর আল্লাহ তাআলার হুকুমে এবং ফেরেশতাদের সর্দার জিব্রাইল আলাই সাল্লাম নবীজির কাছে এসে তাকে সংবাদ দিলেন যে জনৈক এক ইহুদি ওনার ওপর যাদু টোনা করেছে এবং যে জিনিসের মাধ্যমে তার উপরে জাদু করেছে সেটি একটি কুপে রয়েছে।
পরে রাসুল সালাম সালাম লোক পাঠিয়ে সেই কূপ থেকে তা উদ্ধার করে নিয়ে আসেন এবং তাতে কয়েকটি গিটবদ্ধ ছিল। রাসুল সালাম সালাম সূরা নাস সুরা ফালাক পড়ে ফুঁক দেওয়ার সাথে সাথেই সেই গিটগুলো আস্তে আস্তে খুলে যায় এবং নবীজি আস্তে আস্তে সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হয়ে ওঠেন।
আরো পড়ুনঃ শবে কদরের গুরুত্ব ও ফজিলত-শবে কদরের রাতে করণীয়
একাধারে অন্য বর্ণনায়,
👉হযরত আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন এট দা রাসূলুল্লাহ সাল্লাম এর উপর যাদু করা হয়েছিল যার প্রভাবে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েন যে কাজটি তিনি করেনন। এরপর হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুকে তিনি বললেন আল্লাহ তাআলা আমাকে জানিয়েছেন যে আমার রোগটা আসলে কি? আমি স্বপ্নে দেখতে পেলাম যে দুজন লোক আমার কাছে আসলেন এবং একজন আমার শিওর এর কাছে বা মাথার কাছে বসলেন এবং অন্যজন আমার পায়ের কাছে বসলেন।
মাথার কাছে বসে থাকা ব্যক্তিটি অন্য ব্যক্তিটিকে প্রশ্ন করল যে আমার রোগটা কি? অন্য ব্যক্তিটি উত্তর বললেন যে উনি জাদুগ্রস্থ ওনার ওপর যাদু টোনা করা হয়েছে। প্রথমে একটু জানতে চাইলেন যে তার উপরে কে যাদু করেছে? উত্তরে দ্বিতীয় জন বললেন ইহুদিদের মিত্র মুনাফিক লাবিদ ইবনে আসাম নামক একজনকে ইহুদি যাদু করেছে।
আবার প্রশ্ন করা হলো কি দিয়ে তাকে জাদু করা হয়েছে? উত্তরে সে বলল একটি চিরুনির মাধ্যমে। আবার তাকে প্রশ্ন করা হলো যে আসলে চিরুনিটি কোথায় রয়েছে? উত্তরে দ্বিতীয়জন বলল খেজুর গাছের পাতার আবরণীতে ঢাকা "বীর যরোয়ান" নামক একটি কুপে পাথরের নিচে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে সে চিরুনিটিকে।
এর পরে নবীজি সে কূপের কাছে গেলেন এবং তিনি যা স্বপ্ন দেখেছিলেন বাস্তবে তাই দেখতে পেলেন পরে সেখান থেকে চিরুনিটি সংগ্রহ করে নিয়ে আসলেন তারপর সেই চিরদিন থেকে তাকে যেভাবে যাদুটনা করা হয়েছিল সেভাবে তিনি উক্ত ছড়াটি সূরা নাস এবং সূরা ফালাক পাঠ করে আরোগ্য লাভ করলেন।
সূরা নাস এর ফজিলত
✅রাসূলুল্লাহ সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি প্রত্যহ সকাল এবং বিকালে সূরা এখলাছ সূরা নাস ও সূরা পাঠ করে তাকে ঐদিন সকল বালা মুসিবত থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ওই সূরাগুলি তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়। (আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসায়ী, এবং ইবনে কাসির)
✅ওকবা ইবনে আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন, তোমরা দেখতে পাচ্ছ কি এই রাত্রিতে আল্লাহ তায়ালা আমার প্রতি এমন একটা আয়াত নাযিল করেছেন যা সমতল আয়াত কোথাও দেখা যায় না অর্থাৎ যে আয়াত গুলি নাজিল করা হয়েছে সে আয়াতগুলি হল কুল আউযুবি রব্বিল ফালাক এবং কুল আউযুবি রাব্বিন নাস। এ আয়াত বিশিষ্ট তাওরাত ইঞ্জিল ও যাবুর এবং কোরআনেও এর অন্যরুপ কোনো সুরাহ নেই। (সহিহ মুসলিম)
✅কোন এক সফরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ওকবা ইবনে আমির রাঃ কে রাসূল সাল্লাম বললেন যে সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করতে অতঃপর মাগরিবের নামাজের সময় এ সূরা দুটি তেলাওয়াত করে বললেন যে ব্যক্তি ঘুমাতে যাওয়ার সময় এবং ঘুম থেকে ওঠার সময় পাঠ করবে তারপর আল্লাহর রহমত নাযিল হতে থাকবে।
✅রাসূলুল্লাহ সাঃ প্রত্যেক নামাজের পর এ সূরা দুটি পাঠ করার কথা বলেছেন। (আবু দাউদ শরীফ ও নাসাঈ শরীফ)
✅হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হাবিব (রাঃ) বর্ণিত এক রাত্রিতে মিশন বৃষ্টি হচ্ছিল এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল আমরা রাসূলুল্লাহকে খুঁজতে বের হয়েছিলাম যখন তাকে দেখতে পেলাম তখন তিনি প্রথমেই বললেন বলো আমি আরজ করলাম বা তাকে জিজ্ঞাসা করলাম কি বলবো তিনি বললেন সূরা ইখলাস ও সূরা নাছ ও সূরা ফালাক সকাল সন্ধ্যায় এগুলো যদি তিনবার পাঠ করেন তাহলে তুমি প্রত্যেক সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ করবে। (মাজহারী শরীফ)
সূরা নাস আমলের বিশেষত্ব-সূরা নাস সম্পর্কে হাদিস
✅যে ব্যক্তি সকাল সন্ধ্যায় সূরা ইখলাস সূরা নাস ও সূরা পাঠ করবে সে ব্যক্তি শয়তানের অনিষ্ট ও যাদুটনা থেকে হেফাজতে থাকবে এবং সে সকল বিপদ আপদ থেকে নিরাপদে থাকবে। (তিরমিজী শরিফ)
✅হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন প্রতি রাত্রে ঘুমাতে যেতেন তখন নিজের হাত তার হাতের সঙ্গে মিলাতেন এবং সূরা ইখলাস সূরা ফালাক ও সূরা নাস একত্রে পাঠ করতেন এবং তা পড়ার পর নিজের যতটুকু অংশ সম্ভব রয়েছে তিনি তাহার বুলিয়ে দিতেন তিনি মাথা থেকে মুখমন্ডল এবং শরীরের সামনের অংশ থেকে শুরু করতেন তিনি তিনবার করে পালন করতেন। (বুখারী শরীফ)
✅ফজর ও মাগরিবে এ দুই ওয়াক্তের ফরজ নামাজের পর যদি সূরা ইখলাস সূরা ফালাক ও সূরা নাস প্রতিটি সূরা তিনবার করে পাঠ করা সুন্নত এবং অন্যান্য ফরজ সালাত আদায়ের পরে এই সূরা গুলি একবার করে পাঠ করতে বলা হয়েছে। (আবু দাউদ শরীফ)
শেষ কথাঃ সূরা নাস বাংলা অর্থসহ-সূরা নাস এর ফজিলত
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আপনারা যারা আজকে আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়লেন আশা করি আপনারা যদি নিয়মিত শয়তানের সমস্ত অনিষ্ট ও যাদু টোনা থেকে মুক্ত থাকতে চান তাহলে নিয়মিত আমাদের এ দোয়াটি পাঠ করা উচিত তাহলে আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি জানিয়ে দিতে আপনাদের বন্ধুবান্ধবের মাঝে শেয়ার করুন। এবং আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল না আসা পর্যন্ত ততক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকুন সাথেই থাকুন ধন্যবাদ। ২০২
বন্ধুমহল আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url