ছাফী সিরাপ খাবার নিয়ম ও উপকারিতা
সুপ্রিয় পাঠক বিন্দু আমরা ছাফী সম্পর্কে অনেক শুনেছি। এটা রক্ত দূষণ, ফোঁড়া, ব্রণ, ফুসকুড়ি, একজিমা,খোস-পাঁচড়া ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের রোগ ভালো করে। আসলে কি তাই ? এই পোস্টটিতে আমরা বিস্তারিত জানবো। তবে চলুন দেরি না করে জেনে আসি ছাফী সম্পর্কে............
ভূমিকাঃ
ছাফী মূল্যবান প্রাকৃতিক উপাদানের সমন্বয়ে প্রস্তুত বহুমুখী গুণসম্পন্ন হারবাল পলিফার্মাসিউটিক্যালস ওষুধ, যা বিগত ১৯৩৯ সাল থেকে রক্ত ও চর্ম রোগের চিকিৎসায় সাফল্যের সহিত ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ছাফী রক্ত বিশুদ্ধের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে উদ্দীপ্ত করার মাধ্যমে রক্ত পরিশোধন করে।
ইহা মুত্র ও ঘর্ম নিঃসরণ বৃদ্ধি করে এবং পরিপাকতন্ত্রকে উদ্দীপ্ত করার মাধ্যমে অস্ত্রের গতি বৃদ্ধি করে। ছাফী নাকের রক্তক্ষরণ বন্ধ করে, কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় করে, কোষস্থ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ঋতু পরিবর্তনকালীন সৃষ্ট বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
ছাফীর উপাদানঃ
সোনা পাতা, রেউচিনি, কালকাসুন্দে, তুলসী, তেউরী মূল, গোলাপ ফুল, মুন্ডীরী ফুল, নীলকণ্ঠী, শাহতারা, অপরাজিতা, নাগদনা, শাপলা ফুল, শিশু পাতা, রক্তচন্দন, গুলঞ্চ, হরীতকী, একাঙ্গি, চিরতা, কালমেঘ, রক্তকাঞ্চন, নিম, হলুদ এবং অন্যান্য উপাদান পরিমাণমত।
গুরুত্বপূর্ণ উপাদানসমূহের ওষুধি গুণাগুণ ও কার্যকারিতাঃ
❖ নিম(Azadirachta indica): প্রধান সক্রিয় উপাদান নিখিন, নিম্বিডিন। নিম রক্ত পরিশোধক, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, শক্তিশালী অণুজীবনাশক ও চম রোগ দূরকারক। নিম ব্রণ, ফোঁড়া, ফুসকুড়ি, একজিমা, খোস-পাঁচড়া, চুলকানী, হাম, অ্যালার্জি এর চিকিৎসায় কার্যকরী।
❖ হলুদ (Curcuma longa): প্রধান সক্রিয় উপাদান কারকিউমিন। ইহা রক্ত পরিষ্কারক, শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাবর্ধক, বিষক্রিয়ানাশক। এটি ত্বককে ফর্সা, উজ্জ্বল, মসৃণ করে, ত্বকের সংক্রমণ দূর করে, অ্যালার্জি এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধেও কার্যকরী।
❖ রক্তচন্দন (Pterocarpus santalinus):ব্রণ, ফোঁড়া, মূত্রনালীর সংক্রমণ এর চিকিৎসায় কার্যকরী।
যে সকল রোগের জন্য ছাফীর নির্দেশনা ঃ
ব্লাড ইমপিউরিটিস (রক্ত দূষণ), বয়েল (ফোঁড়া), একনি (ব্রণ), পিমপল (ফুসকুড়ি), রেমিসেস (বিবর্ণতা), একজিমা, সোরিয়াসিস, স্ক্যাবিস (খোস-পাঁচড়া), নোজ ব্রিডিং (নাকের রক্তক্ষরণ), কনস্টিপেশন (কোষ্ঠকাঠিন্য), ওবেসিটি (স্থূলতা), জেনারেল ল্যাসিটিউড (অবসাদ), মিজেলস (হাম) এবং বার্নিং সেনসেশন ডিউরিং ইউরিনেশন (প্রস্রাবকালীন জ্বালা-পোড়া)।
রোগের প্রোফাইল (Disease Profile):
❖ ব্রণ (Acne/Pimples): ঘর্মগ্রন্থি সমূহের বিপর্যয় ঘটে বলে ত্বক বেশি তৈলাক্ত হয়ে উঠে, জীবাণুর বহিরাক্রমণে প্রদাহের সৃষ্টি হয়, আর সে সাথে তৈল নিঃস্রাবী নালীও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ সকল কারণে ত্বকে ব্রণের সৃষ্টি হয়। তেরো বছর থেকে উনিশ বছর বয়স পর্যন্ত শতকরা ৯০ জনেরই এ সমস্যাটি কমবেশি হয়ে থাকে। প্রোপাইনি ব্যাকটেরিয়াম একনিস নামক জীবাণু লোমের গোঁড়ায় থাকে। অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের প্রভাবে ত্বকে অবস্থিত সিবেসিয়াস গ্রন্থি থেকে সিবাম নিঃসরণ বেড়ে যায় এবং জীবাণু এ সিবাম এর সাথে মিশ্রিত হয়ে মুক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরী করে, এর ফলে লোমের গোড়ায় প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং কেরাটিন জমতে থাকে। যা পরবর্তীতে ব্রণ রূপে দেখা দেয়।
❖ রক্ত পরিশোধকঃ
ছাফী পরিপাকতন্ত্র, মূত্রতন্ত্র, রক্ত, কোষ-কলা এবং সর্বোপরি ত্বক হতে বিষক্রিয়া দূর করে। ইউনানী মতে দেহে বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতির কারণে বেশির ভাগ চর্মরোগ হয়ে থাকে। ছাফী উক্ত বিষাক্ত পদার্থসমূহ ঘাম, মূত্র ও মলের মাধ্যমে দেহ হতে অপসারণ করে ও রক্ত দুষ্টজনিত রোগসহ বিভিন্ন প্রকার চর্মরোগ দূর করে এবং সেই সাথে ত্বকের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে। দেহের মেটাবোলিক ওয়েস্ট এর সাথে স্কিন ডিজিজের সম্পর্ক আছে। ছাফীতে বিদ্যমান উপাদান সোনা পাতা, রেউচিনি, কালকাসুন্দে, হরীতকী মেটাবোলিক ওয়েস্ট এক্সক্রেশনের মাধ্যমে চর্মরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং ল্যাক্সেটিভ হিসেবেও কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এছাড়াও ছাফী শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে দেহে ফ্রি-রেডিক্যালসমূহকে ধ্বংস করে।
❖মূত্রকারকঃ
ছাফী মুত্রকারক হিসেবে ইউরিনের ফ্লো বৃদ্ধির মাধ্যমে ইউরিক এসিডসহ অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ অপসারণে সহায়তা করে।
সেবন বিধিঃ
ছাফী সিরাপঃ অ্যাডাল্ট: ২-৪ চা চামচ (১০-২০ মিলি) দৈনিক ১-২ বার সেব্য। চলড্রেন। ১/২-১ চা চামচ (২.৫-৫ মিলি) দৈনিক ১-২ বার সেব্য।
ছাফী ক্যাপসুলঃ
১ ক্যাপসুল দৈনিক ২ বার সেব্য। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেব্য।
মূল বার্তাঃ
১. ছাফী-ব্লাড ডিটক্সিফায়ার (রক্তের বিষক্রিয়ানাশক) হিসেবে কাজ করে।
২. ছাফী-চর্মরোগ প্রতিরোধ করে।
৩. ছাফী-ব্রণ ও ফুসকুড়িমুক্ত উজ্জ্বল ত্বক নিশ্চিত করে।
প্রশ্ন: ছাফী কিভাবে কাজ করে?
উত্তরঃ আপনি জানেন, মেটাবোলিক ওয়েস্ট এর সাথে স্কিন ডিজিজের সম্পর্ক আছে। ছাফীতে বিদ্যমান উপাদান সোনা পাতা, রেউচিনি কালকাসুন্দে, হরিতকী মেটাবোলিক ওয়েস্ট এক্সক্রেশনে সাহায্য করে। এছাড়াও ছাফী ডায়ইউরেটিক ও ইমিউনোস্টিমুলেন্ট হিসেবে কার করে।
ছাফীতে বিদ্যমান নিম, হলুদ, তুলসী এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিফাংগাল গুণাগুণ আছে। ছাফীর উপাদান নিম, চিরতা, হলুদ, তুলসী, শাহতারা এর এ্যান্টিহিস্টামিন গুণাগুণ আছে। ছাফীর উপাদান শাহতারা, নিম, নীলকণ্ঠী, মুন্ডীরী, শিশম, চিরতা, রক্তকাঞ্চন, হলুদ রক্ত হতে বিষাক্ত উপাদান অপসারণে সহায়তা করে এবং বিভিন্ন প্রকার চর্মরোগ নিরাময় করে।
ছাফী ১৯৩৯ সাল থেকে মার্কেটে আছে এবং সাফল্যের সাথে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। স্কিন ডিজিজে ছাফীর কার্যকারিতার উপর ইন্ডিয়াতে বেশ কিছু ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়েছে।
❖প্রশ্ন: ছাফী খুব তিতা, খেতে কষ্ট হয়?
উত্তরঃ ছাফীতে নিম, চিরতা, শাহতারা, কালমেঘসহ আরো কিছু তিতা উপাদান আছে বলে এটি সেবনের সময় তিতা লাগে। তবে যে সকল রোগীরা তিতা সিরাপ একদমই পছন্দ করে না তাদের জন্য ছাফী ক্যাপসুল আছে।
❖প্রশ্নঃ ডায়াবেটিসের রোগীরা কি ছাফী সিরাপ সেবন করতে পারবে?
উত্তরঃ না । ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য ছাফী ক্যাপসুল আছে।
❖প্রশ্নঃ তিতার কারণে ছাফী সিরাপ কি অন্য কিছুর সাথে মিশিয়ে সেবন করা যাবে
উত্তরঃ যাবে । পানি, মধু, ফলের রস ও দুধের সাথে মিশিয়েও সেবন করা যাবে।
❖প্রশ্ন: কনস্টিপেশনের জন্য সিরাপ নাকি ক্যাপসুল বেশি ভালো কাজ করে?
উত্তরঃ সিরাপ বেশি ভালো কাজ করে। এক্ষেত্রে ঈষদুষ্ণ পানি বা দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে অধিক কার্যকরী ফলাফল পাওয়া যায়।
❖প্রশ্ন: দীর্ঘদিন ছাফী সেবনে কোন সাইড ইফেক্ট পরিলক্ষিত হয় কিনা?
উত্তরঃ ছাফী দীর্ঘদিন সেবনে এখনও পর্যন্ত কোন সাইড ইফেক্ট পরিলক্ষিত হয় নি। তারপরও সাবধানতার জন্য ৩ মাস খাওয়ার পর ১৫ দিন বন্ধ রেখে পুনরায় সেবন করতে বলা হয়।
শেষ কথাঃ
এই বিষয়ে যদি আপনি আরো জানতে চান তাহলে আমাদেরকে কমেন্ট করুন। আমাদের পোস্টটি আপনার কাছে ভালো লাগলে আমাদের শেয়ার করুন।আজকে তাহলে এখানেই শেষ করা যাক। কথা হবে পরের কোন একটি নতুন আর্টিকেলে নিয়ে।ধন্যবাদ।২০৩
বন্ধুমহল আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url