ঠান্ডা জ্বর হলে করণীয় কি?

যে কেউ হঠাৎ করে জ্বরে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে জ্বর নিজে কোনো রোগ নাম নয়, অন্য রোগের লক্ষণ হিসাবে শরীরে প্রকাশ ঘটে। শরীরে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াসহ জীবাণুর আক্রমণ ঠেকাতে শরীরের নিজস্ব প্রক্রিয়ার কারণেই জ্বর আসে। জ্বর এলে অনেকের গলা ব্যথা, কাশি, খাবারে অরুচি, সেই সাথে শরীরে দুর্বলতা দেখা দেয়।

ঠান্ডা জ্বর হলে করনীয়


আবহাওয়ার পরিবর্তনের সাথে সাথে তাপমাত্রার একটা তারতম্য ঘটে। আমাদের শরীর সেটা হঠাৎ করে মানিয়ে নিতে পারে না বলেই জ্বর কাশি দেখা যায়। জ্বর হবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে জ্বর হলে শুরু থেকেই যদি কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলা যায় তাহলে জ্বরের কারণে কষ্ট কম হবে এবং দ্রুত জ্বর সারিয়ে তোলা সম্ভব হবে এবং এমন ভাইরাল জ্বরকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

জ্বর বিষয়ে কিছু উপদেশঃ

বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ভাইরাস জীবাণুর সংক্রমণের কারণে এ জ্বর হয়। এটি সাধারণত ৭-১৪ দিন স্থায়ী হতে পারে। ওষুধ ও পুষ্টিকর খাবার খেলে এই সময়ের মধ্যে জ্বর ভালো হয়ে যায়। ভাইরাল জ্বরে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। 

ভাইরাল জ্বরের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হলো শরীরের পেশিতে প্রচণ্ড ব্যথা, চোখ লাল হওয়া, মাথা ভারী মনে হওয়া, নাক দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি। তবে শিশুদের মুখ লাল হয়ে যায়, শরীরের তাপমাত্রা বেশি, মাথাব্যথা, সর্দি ও কাশি হতে দেখা যায়।

এই জ্বর চেনার উপায়ঃ

হঠাৎ জ্বর আসা ও সাত-আট দিন ধরে চলতে থাকা। শরীরের তাপমাত্রা ১০২-১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট থাকে। বেশির ভাগ সময় জ্বরের সঙ্গে প্রচণ্ড মাথাব্যথা থাকে। বিশেষ ক্ষেত্রে জ্বরের সঙ্গে পেটব্যথা, বমি, সর্দি, কাশি থাকে। শরীর, মুখ, হাত ও পার্যায়ে অসহ্য ব্যথা থাকে। ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে। জ্বরের সঙ্গে গলাব্যথা হতে পারে। বিশ্বাদ, বমি বমি ভাব ও খিদে কমে যায়। মাত্রা খুব বেশি হলে শিশুরা অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।

জ্বর আসলে খেতে পারেন প্যারাসিটামলঃ

শরীরে ১০০-১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা হলে ট্যাবলেট হিসেবে ভরাপেটে প্যারাসিটামল খেতে হবে। ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হলে সাপোজিটরি দিতে হবে। জ্বরের তিন দিন পর্যন্ত অস্বাভাবিক কোনো লক্ষণ না থাকলে রোগী শুধুই প্যারাসিটামল গ্রহণ করবে। সাধারণ তিনদিন পর্যন্ত জ্বরের অস্বাভাবিক কোনো লক্ষণ না দেখা দিলে শুধু প্যারাসিটামল খেতে হবে।

জ্বর এলে যা করবেন করবেনঃ 

জ্বর থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে জ্বর কমানোর ও শরীরের ব্যথা কমানোর ওষুধ খেতে পারেন। তবে যেহেতু জ্বর সাধারণত ৭-১০ দিন স্থায়ী হয় সেহেতু শুধু ওষুধের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে ঘরে বসেও জ্বর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বাসায় জ্বর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুরো শরীর নরম কাপড় ভিজিয়ে মুছে ফেলতে হবে।

মাথা পানি দিয়ে ধুয়ে বাতাস করে জ্বর কমাতে হবে। জ্বর কখনোই বাড়তে দেওয়া যাবে না। খাওয়াদাওয়া স্বাভাবিক রাখতে হবে। শরীরে যাতে পুষ্টির অভাব না হয়, সে জন্য পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। শরীরের রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায় পুষ্টিকর খাবার। 

আর রোগপ্রতিরোধক্ষমতা ঠিক থাকলে সেই ক্ষমতা দিয়ে সাধারণ ভাইরাল জ্বর ভালো হয়ে যায়। অসুস্থ ব্যক্তিকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। বাইরের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। সর্দি-কাশি, গলাব্যথা হলে সকাল-বিকেল আদা চা বা কফি খাওয়া যেতে পারে।

ঘরোয়া চিকিৎসাঃ

বিশ্রাম নিতে হবে ও পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান হবে

শরীরকে উষ্ণ রাখতে পরিবেশ তৈরি হবে

প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। পানির পাশাপাশি তরল খাবার যেমন ডাবের পানি, সব বিভিন্ন রকম সুপ ইত্যাদি পান করতে হবে ।

গলা ব্যথা হলে উপশমের জন্য এক গ্লাস কুসুম কুসুম গরম পানিতে এক টেবিল চামচ লবণ দিয়ে গড়গড়া করতে হবে। তবে ছোটো শিশুরা ঠিকমতো গড়গড়া করতে পারে না বলে তাদের ক্ষেত্রে এই পরামর্শ প্রযোজ্য নয় ।

কাশি হলে  মধু ও তুলসী পাতা বা বাসক  রস একসঙ্গে মিশিয়ে হালকা গরম করে খেতে পারেন।

সতর্কতা:

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো অ্যান্টিবায়াটিক খাবেন না।ছোঁয়াচে বিধায় ভাইরাল জ্বর হলে রোগীকে অন্যদের থেকে আলাদা রাখতে হবে। জ্বর বেড়ে গেলে অনেকের মাঝে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের প্রবণতা দেখা যায়। অ্যান্টিবায়োটিক জ্বর কমায় না, শরীরে প্রবেশ করা জীবাণুকে মেরে ফেলে কিংবা দুর্বল করে দেয়। অহেতুক অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের কারণে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে ওই অ্যান্টিবায়েটিক আর কাজ না-ও করতে পারে।

প্রফেসর ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন

শেষ কথাঃ

এই বিষয়ে যদি আপনি আরো জানতে চান তাহলে আমাদেরকে কমেন্ট করুন। আমাদের পোস্টটি আপনার কাছে ভালো লাগলে আমাদের শেয়ার করুন।আজকে তাহলে এখানেই শেষ করা যাক। কথা হবে পরের কোন একটি নতুন আর্টিকেলে নিয়ে।ধন্যবাদ।২০৩

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বন্ধুমহল আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url