অশ্বগন্ধার উপকারিতা ও অপকারিতার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
বন্ধুরা আজ আমরা করবো অশ্বগন্ধার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। অশ্বগন্ধাতে রয়েছে অনেক উপকারিতা যেমন শুক্রাণু বৃদ্ধি করে, ভালো ঘুম হয়, সর্দি কাশি দূর করে, চোখের সমস্যা দূর করে এবং হজমের সমস্যা দূর করা সহ শরীরের নানাবিধ কাজে লাগে। আজকে এই আর্টিকেল টিতে অশ্বগন্ধার এই সকল গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ভূমিকাঃ
অশ্বগন্ধাকে ইন্ডিয়ান জিনসেং হিসেবেও অভিহিত করা হয়।ধারণা করা হয় আজ থেকে প্রায় ৬০০ খ্রিস্টাব্দ বা তারও আগে থেকে অশ্বগন্ধার ব্যবহার শুরু হয়েছে। । এটি হল একটি ভেষজ উদ্ভিদ।
আয়ুর্বেদশাস্ত্র মতে মানবদেহের সুস্থতায় এটি অনেক অবদান রাখতে পারে। অশ্বগন্ধা মূলত শারীরিক ক্লান্তি, নানা ধরণের ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করা সহ একাধিক রোগের ঔষধ হিসেবে কাজ করে।
এডাপ্টোজেন অশ্বগন্ধার আরেক নাম, যার অর্থ হলো অশ্বগন্ধা আমাদের মানসিক চাপ কমাতেও বেশ সাহায্য করে। যারা হতাসায় ভুগছেন তারা নিয়মিত অশ্বগন্ধা খেলে উপকার পাবেন।
আরো পড়ুনঃ ন্যাচারালস শিমূল মূল চূর্ণে গুনাগুন ও উপকারিতা
অশ্বগন্ধার বিভিন্ন উপকারিতাঃ
- বহুল পরিচিত নাম অশ্বগন্ধা যা শুক্রাণু বাড়াতে কাজ করে। এ গাছের রস শক্তিবর্ধক ।
- অশ্বগন্ধা গুঁড়ো ঘুমানোর আগে মধু সহ খেলে তা ভালো ঘুমের সহায়ক হিসেবে কাজ করে ।
- সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে অশ্বগন্ধার মূল গুঁড়।
- স্নায়ুবিক বিভিন্ন রোগের সমাধান হিসেবে কাজ করে অশ্বগন্ধার পাতা ও মূল ।
- অশ্বগন্ধা আমাদের চোখের ব্যথা দূর করতে ভূমিকা পালন করে ।
- মাথা ঝিমঝিম করা, অবসাদ,সংজ্ঞাহীনতা, ছাড়া নানা ধরনের মানসিক ও শারীরিক সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। ক্লান্তি দূর করে- মনোযোগ বাড়ায় ও সঞ্জীবনী শক্তি পুনরুদ্ধার করে অশ্বগন্ধা ।
- অশ্বগন্ধা হজমের সমস্যা দূর করে । অম্বল-অজীর্ন ,পেটের ব্যথা এবং পেট ফাঁপা নিরাময় করে অশ্বগন্ধার ফল। কিন্তু অশোধিত অশ্বগন্ধা গুঁড়ো হজমে গোলমাল সৃষ্টি করতে পারে।
- এছাড়াও যেভাবে অশ্বগন্ধা মানবদেহে কাজ করে তা নিম্নে আলোচনা করা হলো-
অনিদ্রা দূর করেঃ
আগেই জেনেছি অশ্বগন্ধা স্নায়ুকে আরাম প্রদান এবং ক্লান্তি দূর করতে খুবই কার্যকারী ঔষধ হিসেবে পরিচিত। গবেষণার থেকে জানা যায় যে, অশ্বগন্ধা গ্রহণ করলে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।
আরো পড়ুনঃ মাসিক দেরিতে হওয়ার ৭ টি কারন বা অনিয়মিত ঋতুস্রাব হওয়ার কারণ
স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করেঃ
অশ্বগন্ধায় অ্যানজাইলটিক উপাদান উপস্থিত থাকে, যার ফলে এটি স্নায়ুতন্ত্রের ওপর কাজ করে মানসিক চাপকে কমিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। আপনি যদি কোন বিষয়ে খুব ভয় পেয়ে যান তাহলে প্যানিক অ্যাট্যাক হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। এই জাতীয় সমস্যা এড়াতে অশ্বগন্ধা সেবনে ভালো উপকার পাবেন।
কোলেস্টেরল দূর করেঃ
অশ্বগন্ধা দেহের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং পেশির শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাই যাদের শরীরে বাজে কোলেস্টেরল আছে তারা নিয়মিত অশ্বগন্ধা সেবনে উপকার পাবেন।
কাম উত্তেজনা বৃদ্ধিঃ
অশ্বগন্ধা একটি আফ্রোডাইজিয়াক হিসেবে প্রাচীনকাল হতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কাম সূত্রে যৌন উত্তেজক অশ্বগন্ধাকে অত্যন্ত শক্তিশালী ভেষজ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আসলে, অশ্বগন্ধা আফ্রোডাইজিয়াক জাতীয় ভেষজ পণ্যগুলির মধ্যে অনন্য।
অশ্বগন্ধা কামাকাঙ্ক্ষা হ্রাস এবং ইরেকটাইল ডিসফাংশনের চিকিৎসায় কার্যকরী ভেষজ হিসেবে স্বীকৃত। পুরুষরা যখন অশ্বগন্ধা সেবন শুরু করেন, তখন তাদের দেহে নাইট্রিক অক্সাইডের উৎপাদন বেড়ে যায,। এটি যৌন আকাঙ্ক্ষা এবং তৃপ্তির বৃদ্ধি ঘটায়।
আরো পড়ুনঃ প্রতিদিন সহবাস করলে কি হয়-সহবাসের উপকারিতা ও অপকারিতা
যৌনক্ষমতা বাড়ায়ঃ
অশ্বগন্ধা ছেলেদের প্রোজেস্টেরনের ও টেস্টোস্টেরন হরমোন এর মাত্রা বৃদ্ধি করে, যার ফলে যৌন মিলনের ইচ্ছে বাড়ে। ছেলেদের বিভিন্ন যৌনসমস্যা দূর করতে প্রাচীনকাল থেকেই অশ্বগন্ধা ব্যবহার করা হয়।
টেস্টোস্টেরনেরঃ
অশ্বগন্ধা রক্তে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়াতে পারে। আর টেস্টোস্টেরনকে বলা হয় সেক্স হরমোন। এটি পুরুষের লিঙ্গ দৃঢ় করে এবং কামাকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি করে। পুরুষদের বয়স বাড়তে থাকলে তাদের দেহে টেস্টোস্টেরনের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পায়।
এছাড়াও বিভিন্ন কারণে রক্তে টেস্টোস্টেরন উৎপাদন কমে যেতে পারে। অশ্বগন্ধা লুটেইনিজিং হরমোন এবং টেস্টোস্টেরনের সিরামের মাত্রা বৃদ্ধি করে, ফলে পুরুষের যৌন হরমোনগুলির মধ্যে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকে। অশ্বগন্ধা করটিজলের বৃদ্ধি রোধ করে স্ট্রেস হ্রাস করতে পরিচিত, করটিজল প্রাকৃতিক টেস্টোস্টেরন উৎপাদনকে বাধাগ্রস্ত করে।
আরো পড়ুনঃ বিয়ের প্রথম রাতের আমল ও সুন্নত-বাসর রাতের নিয়ম কানুন সম্পর্কে জেনে নিন
সহনশীলতা বাড়ায়ঃ
যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতির পাশাপাশি অশ্বগন্ধা শারীরিক পারফরম্যান্স এর উন্নতির সাধন করে। নিয়মিত অশ্বগন্ধা সেবনের ফলে শারীরিক ক্রিয়াকলাপ ,ও ধৈর্য্যশীলতা এবং সহনশীলতা প্রভৃতির উন্নতি ঘটে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাঃ
অশ্বগন্ধায় প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অনেক সাহায্য করে।
থাইরয়েডের নিয়ন্ত্রণেঃ
যাদের শরীরে থাইরয়েড হরমোনের পরিমান কম থাকে অশ্বগন্ধা তাদের এই সমস্যা দূর করতে বেশ কার্যকরী ভুমিকা রাখে। অশ্বগন্ধা শরীরে থাইরক্সিন হরমোনের পরিমান বাড়ায়।
আর্থ্রাইটিস সারাতেঃ
আর্থ্রাইটিস এর ব্যথার তীব্রতা কমাতে অশ্বগন্ধার গুঁড়ো খুবই উপযোগী। আর্থ্রাইটিস সারাতে অশ্বগন্ধা ব্যবহৃত হয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে ।
ক্যান্সার প্রতিরোধঃ
ক্যান্সারের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে অশ্বগন্ধা।আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে মতে অশ্বগন্ধার পাতা ও মূলের নির্যাসে ফাইটোকেমিক্যালস উপাদান উপস্থিত থাকে যা টিউমার কোষকে ধ্বংস করে ও সেই কোষে রক্ত সরবারহ বন্ধ করে দেয়। ক্যান্সারের সময় কেমোথেরাপির মধ্যে দিয়ে যাদের যেতে হয়, তাদের জীবন মানের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে অশ্বগন্ধা।
আরো পড়ুনঃ স্তান ক্যান্সারের কি ? এর লক্ষণ এবং কেন হয়
ডায়াবেটিসের সমস্যা কমাতেঃ
অ্যান্টি-ডায়াবেটিক হিসাবে অশ্বগন্ধার মূল ও পাতার নির্যাস ব্যবহার হয়। এই অংশের কোষে যে ফ্ল্যাভোনয়েডস থাকে তা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষদের শরীরে ইনসুলিনের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। জানা গেছে অশ্বগন্ধা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের লিপিডের পরিমান ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া-অশ্বগন্ধার অপকারিতা
এতক্ষণ অশ্বগন্ধার উপকারিতা গুলো জানার পর চলুন এবার অশ্বগন্ধার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো সম্পর্কে জানা যাক। অশ্বগন্ধার তেমন কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বলেই জানা যায়। তবে নিয়িমিত অনেকদিন ধরে ব্যবহার করলে হয়তো শ্বাসপ্রশ্বাস সংক্রান্ত সমস্যা, ঝিমিয়ে পড়া, ব্লাড প্রেসার কমতে পারে ও অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তাই এটি একটানা না খেয়ে মাঝে মাঝে কিছুদিন গ্যাপ দিয়ে খাওয়া উচিত। আর সপ্তাহে সাতদিন না খেয়ে ৪/৫ দিন খেলেই ভালো উপকার পাওয়া যাবে।
গর্ভবতী মহিলারা এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবেন। তারা এটি ব্যবহার করার আগে ডাক্তারের সঙ্গে অবশ্যই পরামর্শ করে নেবেন।
অশ্বগন্ধার ভেষজ গুনাগুণ সম্পর্কে তো জানলেন, তাহলে বুঝতেই পারছেন এটি সুস্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারি। তাই সুস্বাস্থ্যের জন্য এখন থেকেই ন্যাচারালস অশ্বগন্ধা ব্যবহার করা শুরু করতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ শীতে বিভিন্ন পিঠার রেসিপি
শেষ কথাঃ
এই বিষয়ে যদি আপনি আরো জানতে চান তাহলে আমাদেরকে কমেন্ট করুন। আমাদের পোস্টটি আপনার কাছে ভালো লাগলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধের সাথে শেয়ার করুন। আজকে তাহলে এখানেই শেষ করা যাক। কথা হবে পরের কোন একটি নতুন আর্টিকেলে নিয়ে। ধন্যবাদ।
বন্ধুমহল আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url