শীতে বিভিন্ন পিঠার রেসিপি
সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ , পিঠা খায় না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া প্রায় মুশকিল। কথায় আছে ,শীতকালের আয়েস, পিঠা পুলি আর পায়েস। পিঠার কথা মনে হলেই জিভে জল চলে আসে। শীতের দিনে গ্রাম বাংলায় বিভিন্ন স্বাদের বিভিন্ন প্রকারের পিঠা তৈরি হয়। পাঠকবৃন্দ চলুন জেনে নেয়া যাক শীতের বিভিন্ন পিঠার নাম, কিভাবে তৈরি করতে হয়, এবং কি কি উপকরণ প্রয়োজন হয়।
আর্টিকেল সূচিপত্রঃ
ভূমিকাঃ
পিঠা বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার । শীতে গ্রাম বাংলায় বিভিন্ন প্রকার পিঠা তৈরি করার ধুম পড়ে যায়। পিঠা তৈরি করতে প্রথমত একটি বাটিতে ডিম, চালের গুড়া, লবণ, ময়দা বা আটা প্রয়োজনমতো গুড় এবং পানি মিশিয়ে পিঠার গোলা তৈরি করতে হয়।
আরো পড়ুনঃ রাশিয়ান চিকেন কাটলেট তৈরির নিয়ম -- রাশিয়ান চিকেন রেসিপি ২০২৪
একটি পাত্রে সুজি ভেজে লালচে হয়ে এলে দুধ , চিনি বা গুড় মিশিয়ে ঘন হয়ে আসতে থাকলে নারিকেল বাটা এবং কিছু পরিমাণে এলাচ দিয়ে নামিয়ে ফেলুন । বাংলাদেশের কয়েকটি জনপ্রিয় পিঠা হলো চিতই পিঠা ,পাকানো পিঠা , পাকোয়ান পিঠা, পাটিসাপটা, কুশলি পিঠা, ভাপা পিঠা, নকশী পিঠা এবং পুলি পিঠা ইত্যাদি ।
নকশি পিঠা ঃ
নকশি পিঠাতে মূলত দুইটা অংশ থাকে । একটি হচ্ছে খামির অপরটি হয়েছে গুড়ের সিরা । অংশ দুটি আলাদা আলাদা ভাবে বানিয়ে নিতে হয় । বানানোর উপকরণ নিচে দেয়া হল ।
খামিরঃ
চালের গুড়া ৪ কাপ, ময়দা ০১ কাপ, লবণ ০১ চামচ, নারিকেলের গুঁড়া ০১ কাপ, পানি প্রয়োজনমতো। পাত্রে একসাথে লবণ ও পানি মিশে জাল করুন বলক আসলে ময়দার সাথে চালের গুড়া মিশে ফুটন্ত পানিতে ঢেলে দিন , এরপর সাথে থাকা নারিকেলের গুঁড়া যুক্ত করে ভালো করে নেড়ে মিশে নিন এবার ঢেকে দিন চুলার আছ কমিয়ে ১০ মিনিটের মত রেখে দিন।
একটি পাত্রে ঢেলে নিন হালকা করে ঠান্ডা করুন । এবার খামিরটা ভালো করে মেথে নিন এবং লম্বা করে সুতার মত করে নিন। ছুরি দিয়ে হাফ ইঞ্চি করে চাকা চাকা করে কেটে নিন।
সিরাঃ
প্রথমে দুই কাপ পানি ও দুই কাপ চিনি একত্রে মিশে জাল করে নিতে হবে। এখানে আপনারা চিনির পরিবর্তনে প্রয়োজন মত গুড় ব্যবহার করতে পারেন। আর পিঠা ভাজার জন্য নিতে হবে খাবার তেল বা ভোজ্য তেল পরিমাপ মত।
পিঠা তৈরিঃ
এবার আগে থেকে তৈরি করা খামিরের গোল চাকা একটি পিড়ার উপর একটু মোটা রুটি বেলে নিন। রুটির ওপরে এবং নিচে তেল মাখিয়ে নিন । এবার রুটি কে প্রয়োজনীয় সেপে কেটে টুথপিক বা খেজুরের কাঁটা দিয়ে বা কোন সূচালো স্টিক দিয়ে পছন্দ মতো নকশা তৈরি করে নিন।
সব কয়টি পিঠা বানানো হলে গরম ডুবো তেলে ভেজে নিন । পিঠাটি তাড়াহুড়া করে ভাজবেন না। একটু সময় নিয়ে ভেজে নিতে হবে । পিঠা ভাজা হয়ে গেলে গরম অবস্থাতেই সীরাতে ভালোভাবে ডুবিয়ে তুলে নিতে হবে । এবার পরিবেশন করুন।
আরো পড়ুনঃডিসেম্বর মাসের সবজি চাষ পদ্ধতি ২০২৩ জেনে নিন
ভাপা পিঠাঃ
গ্রামীণ হাট বা শহরের অলি গলিতে ভাপা পিঠা বানানো হচ্ছে মানে শীত দরজয় কড়া নাড়ছে । বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পিঠার মধ্যে অন্যতম হলো ভাপা পিঠা । তবে এই পিঠা অনেক এলাকাতে ধুপী পিঠা নামেও পরিচিত ।
প্রথমে চালের গুঁড়া হালকা কুসুম গরম পানি আর প্রয়োজন মত লবণ দিয়ে মেখে চালুনি দ্বারা ছেলে রেখে দিতে হয় আধা ঘন্টার মত । এবার ভাপা পিঠা তৈরীর জন্য যে বিশেষ ধরনের হাড়ি পাওয়া যায়, তাতে পানি ফুটাতে দেওয়া হয় । হাড়ির যে অংশে দিয়ে ভাপ বা বাস্প বের হয় তার ওপর পরিষ্কার কাপড় দিতে হয় ।
আরো পড়ুনঃকেন কাঁচা রসুন খাওয়া উচিত জেনে নিন বিস্তারিত
এবার একটি ছোট বাটিতে প্রথমে চালের গোড়া তারপর গুড় এবং নারিকেল দিয়ে তার ওপর আবারো চালের গুড়া দিতে নারিকেল ও গুড় ঢেকে দিতে হয় । হাঁড়ির ওপর দিয়ে কাপড়ের ওপর বাটিটি আস্তে করে বসিয়ে হাড়ির মুখটি মুড়িয়ে দিতে হয় । দুই থেকে তিন মিনিট পর পিঠাটা নামিয়ে নিতে হয় এভাবেই ভাপা পিঠা তৈরি করতে হয় ।
চিতাই পিঠাঃ
প্রথমে চালের গুড়া , লবণ ও কুসুম গরম পানি দিয়ে গোলা বানিয়ে নিতে হবে । গোলাপি দুই থেকে তিন ঘন্টা রেখে দিন । পিঠা বানানোর আগ মুহূর্তে এক চা চামচ বা প্রয়োজনমতো বেকিং পাউডার মিশিয়ে নিন । গোলাটা খুব বেশি পাতলা বা ঘন তৈরি করা যাবে না ।
এবার মাটির খোলা বা লোহার কড়াই গরম করে নিন । পরিমাপ মতো গোলা গরম করা কড়াইয়ে ঢেলে দিন এবং ঢেকে দিন দুই থেকে তিন মিনিট পর দেখুন পিঠাটা ভালো করে ফুলে উঠেছে কিনা । ভালোভাবে ফুলে উঠলে পিঠাটা খুন্তি দিয়ে তুলে ফেলুন পরিষ্কার কাপড়ের রাখুন । একইভাবে আবার পিঠার গোলা দিন হয়ে গেলে তুলে ফেলুন । আর এভাবেই চিতাই পিঠাগুলো তৈরি করে ফেলুন ।
আরো পড়ুনঃব্রয়লার মুরগির উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন বিস্তারিত
পুলি পিঠাঃ
পুলি পিঠা তৈরি করতে প্রয়োজন চালের গুড়া ০৩ কাপ , বড় নারিকেল একটি খেজুরের গুড় প্রয়োজন মত সামান্য লবণ ও পরিমাণ মতো পানি ।
প্রথমে চালের গুড়া গুলো হালকা করে ভেজে নিতে হয় । পরিমাণ মতো পানি মিশিয়ে ডো তৈরি করেতে হবে । এবার চুলায় কড়াই দিয়ে গরম করে গুড় এবং কোরানো নারিকেল একসঙ্গে জাল দিতে হবে । যখন মিশ্রণটি আঠালো হয়ে আসবে তখন নামিয়ে ফেলতে হবে ।
এবার আগের তৈরি করা ডো বা খামির নিয়ে একটি পিড়ার উপর রুটি আকারে বেলে নিন । এবার একটি স্টিলের গ্লাস দিয়ে গোল গোল আকার রুটি টা কেটে নিন । গোল করে কাটা রুটির মাঝখানে পুর দিয়ে মুখ বন্ধ করে দিন । এভাবে পুলি পিঠা তৈরি করে ভাপেসিদ্ধ করতে হবে । যদি ভেজে খেতে চান তাহলে ডুবো তেলে পিঠাগুলো ভেজে নিন । তৈরি হয়ে গেল সুস্বাদু পুলি পিঠা ।
কুশলী পিঠাঃ
পুলি পিঠা বা কুশলি পিঠা প্রায় একইভাবে তৈরি করতে হয় । চালের গুড়া দুই থেকে আড়াই কাপ , দুধ আধা কেজি থেকে সাড়ে সাতশ গ্রাম চিনি এক থেকে দেড় কাপ গুড় এক থেকে দেড় কাপ শুকনা চালের গুড়া , এক থেকে দেড় কাপ , এলাচ তেজপাতা দারুচিনি তিনটি করে লবণ পরিমাপ মতো ।
এবার প্রথমে চালের গুড়া পানি দিয়ে সিদ্ধ করে ডো তৈরি করে নিতে হবে । তারপর দুধ চিনি গুড় শুকনো চালের গুড়া গরম মসলা সবকিছু একসঙ্গে দিয়ে জাল করতে হবে ঘন হয়ে আসলে নামিয়ে রাখতে হবে । ঠান্ডা করতে হবে ।
আরো পড়ুনঃশিশুদের সাপোজিটরি ব্যবহারের নিয়ম-শিশুদের জ্বর কত হলে সাপোজিটরি দিতে হবে
আগে থেকে সিদ্ধ করা ডো দিয়ে রুটি তৈরি করতে হবে , তা থেকে একটি স্টিলের গ্লাস দিয়ে গোল গোল আকার রুটি টা কেটে নিন । গোল করে কাটা রুটির মাঝখানে পুর দিয়ে মুখ বন্ধ করে দিন । এভাবে পিঠা তৈরি করে ভাপে সিদ্ধ করতে হবে । যদি ভেজে খেতে চান তাহলে ডুবো তেলে পিঠাগুলো ভেজে নিন ।
পাটিসাপটাঃ
পাটিসাপটা তৈরির উপকরণসমূহ ১ লিটার দুধ ,৫০০ গ্রাম চিনি , সুজি ২ টেবিল চামচ , মিহিন নারকেল কোরা আধা কাপ , চালের গুড়া ৫০০ গ্রাম , ময়দা এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ , ভাজার জন্য তেল , স্বাদমতো লবণ এবং পরিমাপ মতো পানি ।
এবার প্রথমে দুধ ও অর্ধেক চিনি ঘন করে জাল করে নিতে হবে । এর ভেতরে সুজি আর নারিকেল দিয়ে ক্ষীর তৈরি করতে হবে । ক্ষীর ঘন হয়ে আসলে নামিয়ে হালকা ঠান্ডা করে নিতে হবে । তারপর চালের গুড়া বাকি চিনি এবং প্রয়োজনমতো লবণ ও পানি মিশিয়ে গোলা তৈরি করে নিন ।
আরো পড়ুনঃনিপা ভাইরাস কি? নিপা ভাইরাস কেন হয়? নিপা ভাইরাসের লক্ষণ ও নিপা ভাইরাসের প্রতিকার
এরপর একটি ফ্রাই প্যানে হালকা করে তেল মাখিয়ে নিন , তেলটি গরম হয়ে এলে আধা কাপ গোলা দিয়ে একটি পাতলা রুটির মতো বানিয়ে নিন । এবার এর রুটির ওপর দিকে শুকিয়ে গেলে এক টেবিল চামচ পরিমাণ ক্ষীর দিয়ে মুড়িয়ে পাটিসাপটার আকার করে অন্য পার ভেজে নিন । একই নিয়মে সবগুলো পিঠা ভেজে নিন । এবার ঠান্ডা হয়ে এলে পরিবেশন করুন ।
শেষ কথাঃ পিঠা আমাদের দেশে একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার এই খাবারটির ছোট থেকে বড় পর্যন্ত সকলেই খেয়ে থাকে । বাঙালি মানেই ভজন রসিক তাই আরো নতুন নতুন রেসিপি পেতে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন । আল্লাহ হাফেজ সকলকে ধন্যবাদ ।২০৩
বন্ধুমহল আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url