হজমশক্তি বাড়ানোর সহজ উপায়
হজম শক্তিকে কিভাবে শক্তিশালী করা যায় সেই সম্পর্কে পুষ্টিবিদরা বলছেন যে, হজম শক্তিকে বাড়ানো বা শক্তিশালী করার বিষয়টি একটু জটিল। কারণ সব মানুষের হজম শক্তি এক ধরনের হয় না। একই খাবার কারো সহজেই হজম হয় অন্য জনার তা হজম হয় না। চলুন জেনে নেয়া যাক হজম বাড়ানোর সহজ উপায় গুলো
ভূমিকা
হজমশক্তি সবল করতে হলে প্রথমে আমাদের খাবারের প্রকারটা বুঝতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ খাবারটি যদি শাক হয় তবে সেটি অবশ্যই তেল দিয়ে ভালো করে রান্না করতে হবে। আবার খাবারটি মাংস জাতীয় হয় তাহলে এর সাথে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার যেমন লেবু থাকে সেইদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। হজম শক্তি ঠিক রাখার জন্য প্রতিবার খাবারের পর অল্প পরিমাণ লেবু ও পানি মিশিয়ে খেলে হজম ভালো হয়।
হজমশক্তির গুরুত্বপূর্ণ
সুস্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে হজম শক্ত। এই কার্যক্রমটি বাধাগ্রস্থ বা কোন ধরনের সমস্যা দেখা দিলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। উল্লেখযোগ্য সমস্যা গুলো হচ্ছে ওজন বেড়ে যাওয়া, ইউরিক এসিড , লিপিড প্রোফাই , গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যাওয়া , গ্যাসের সমস্যা , ডায়রিয়া , কোষ্ঠকাঠিন্য , পুষ্টির অভাব ইত্যাদি ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে।
হজম প্রক্রিয়া গর্ভবতী মা ও শিশুদের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থিত স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘মার্সিওয়ান’য়ের চিকিৎসক স্টিফেন রিগস বলেন, “পাচন তন্ত্র খাবার থেকে পুষ্টি ও শক্তি আহরণ করে, দুষিত পদার্থ দূর করে, অবাঞ্ছিত ব্যাক্টেরিয়া ও ভাইরাস ধবংস করে, বর্জ্য পদার্থ দূর করে পানি ও পুষ্টি শোষণ করে এবং ভিটামিন ও খনিজ দেহে সরবারহ করে। হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক না থাকলে পর্যাপ্ত পুষ্টি পাওয়া যায় না। ফলে গর্ভবতী মায়ের গর্ভে শিশুর বিকাশে বাধাগ্রস্ত হয়।
পুষ্টিবিদ গণেরা বলেন হজম প্রক্রিয়া তিনটা ধাপ থাকে। কি খাবার খাওয়া হচ্ছে সেটা, সেই খাবার পরিপূর্ণভাবে হজম হওয়া এবং হজমের পর সেটা দেহের শোষণ হওয়া। এই তিনটি ধাপি দেহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন তারা। শক্তি বাড়ানোর উপায় গুলো নিম্নে বর্ণনা করা হলো...........
আরো পড়ুনঃ থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করা কি জায়েজ-থার্টি ফার্স্ট নাইট সম্পর্কে ইসলাম কি বলে
- পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেঃ
পুষ্টিবিদরা মনে করেন, আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষ বোঝেই না যে কোন খাবারে তাদের সমস্যা হচ্ছে আর কোন খাবারে সমস্যা হয় না। যার ফলে আমরা আস্তে আস্তে সব ধরনের খাবার বন্ধ করে দিই। তাই আমাদের জানতে হবে বা খেয়াল করতে হবে কোন কোন খাবার খেলে আমাদের সমস্যা হয় আর কোনগুলোতে সমস্যা হয় না।
যার ফলে তারা আস্তে আস্তে প্রায় সব ধরণের খাবার বাদ দিতে থাকে। যেমন, তেলে ভাজা খাবার, দুধ বা দগ্ধজাতীয় খাবার, টক খাবার ইত্যাদি। যদি কারো দুগ্ধ জাতীয় খাবার বা দুধ হজম করতে সমস্যা হয়। তবে দুধ বা দুগ্ধ জাতীয় খাবার একেবারে বাদ না দিয়ে ধীরে ধীরে সেটার সহ্য ক্ষমতা বাড়াতে হবে।
দুধ হজমে জন্য ল্যাকটেজ নামে এক ধরণের এনজাইম থাকে। এই এনজাইম নিঃসরণ বন্ধ হয়ে গেলেও তা আবার নিঃসরণ শুরু করা সম্ভব। তাই কোন কোন কোন খাবার গুলো হজম প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয় বা সমস্যা হয় সেটি এনালাইসিস বা জানাটা খুবই জরুরী। নির্দিষ্ট কিছু ভিটামিনের অভাবেও হজমশক্তি দুর্বল হয়। সেক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা নিলে তা শক্তিশালী করা সম্ভব।
আরো পড়ুনঃ স্তান ক্যান্সারের কি ? এর লক্ষণ এবং কেন হয়
- খাবার গ্রহণের মাধ্যমেঃ
হজমশক্তি সবল করতে হলে প্রথমে আমাদের খাবারের প্রকারটা বুঝতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ খাবারটি যদি শাক হয় তবে সেটি অবশ্যই তেল দিয়ে ভালো করে রান্না করতে হবে। আবার খাবারটি মাংস জাতীয় হয় তাহলে এর সাথে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার যেমন লেবু থাকে সেইদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। হজম শক্তি ঠিক রাখার জন্য প্রতিবার খাবারের পর অল্প পরিমাণ লেবু ও পানি মিশিয়ে খেলে হজম ভালো হয়।
যদি খাবার আগে জিহ্বাতে সামান্য পরিমাণ লবণ স্পর্শ করিয়ে খাবার খেলে সেটিও হজমে করতে সাহায্য করে। যে সমস্ত ব্যাকটেরিয়া গুলো হজম প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করে সেগুলো বেশি খাওয়া যেতে পারে।যেমন দই। পুষ্টিবিদরা বলেন "যাদের হজমে সমস্যা আছে তারা ইয়োগার্ট থেরাপি বা দই খেতে পারেন। দিনের যে কোনো এক সময় ২থেকে৩ মিলি দই খাওয়া যেতে পারে।
হজম শক্তি বাড়ানোর জন্য দারুচিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ মসলা। প্রাকৃতিক এন্টিঅক্সিজেন হিসেবে কাজ করে দারুচিনি, এবং গ্যাস দূর করতে সাহায্য করে।আধা চা–চামচ দারুচিনিগুঁড়া এক কাপ পানিতে মিশিয়ে কয়েক মিনিট সিদ্ধ করে নিন। এই মিশ্রণটি দিনে দুই থেকে তিনবার খেতে পারেন। এতে করে আপনার হজমশক্তির বেশি হবে।
আরো পড়ুনঃ কোন ধরনের, বয়সের মেয়েকে বিয়ে করা ভালো তার ১২টি টিপস জেনে নিন
- শারীরিক ব্যায়ামের সাহায্যেঃ
পুষ্টিবিদরা মনে করেন সব ধরণের শারীরিক ব্যায়াম হজমশক্তিকে বাড়ায় না । তারা বলেন মেটাবলিজম বা হজমশক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট অঙ্গ মানুষের কোমরের ডায়াফ্রামের উপর থেকে শুরু করে নিচ পর্যন্ত থাকে । যেসব ব্যায়াম শরীরের মাঝের অংশের কর্মকাণ্ড যত ভাল হবে হজম প্রক্রিয়া তত ভালো হবে বলে মনে করেন।
শরীরের মাঝের অংশের কর্মকাণ্ড বাড়াতে হলে বিশেষ ধরণের কিছু ব্যায়াম করতে হয় । যেমন, চেয়ারে বসার ক্ষেত্রে রিভলভিং চেয়ার ব্যবহার করলে শরীরের নড়াচড়া সহজ হয়। একই সাথে বসার ক্ষেত্রে যদি টুইস্টিং পদ্ধতি অর্থাৎ শরীরের উপরের অংশ একদিকে এবং নিচের অংশ আরেক দিকে থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে হজম প্রক্রিয়া ভাল হয়।
কিছু ব্যায়াম আছে যেমন, উপুড় হয়ে দুই পা উঁচু করে ৯৫ ডিগ্রি এ্যাঙ্গেলে রাখতে হবে এবং পা দুটি চক্রাকারে ।ডান থেকে বামে এবং বাম থেকে ডানে ঘোরাতে হবে। এটা খুব ভাল কাজ করে। স্পট জগিং বা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে যদি হালকা করে লাফানো-এই ব্যায়ামও খুব উপকারী। শরীরের মাঝের অংশে চাপ পড়ে এমন ব্যায়াম হজমপ্রক্রিয়াকে সহজতর করে।
আরো পড়ুনঃ প্রতিদিন সহবাস করলে কি হয়-সহবাসের উপকারিতা ও অপকারিতা
- শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যায়াম এরঃ
পুষ্টিবিদ সৈয়দা শারমিন আক্তার বলেন, শারীরিক বিভিন্ন ক্রিয়া কতটা ভালভাবে কাজ করবে তা অনেকটাই নির্ভর করে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেনের সরবরাহ আছে কিনা। আর হজম বা শোষণ প্রক্রিয়ার জন্যও অক্সিজেনের বিকল্প নেই। সে কারণেই পুষ্টিবিদরা মনে করেন শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করাটা জরুরী । তিনি বলেন, নাক দিয়ে লম্বা করে শ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে লম্বা করে শ্বাস ছাড়লে দেহে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ে। ফলে হজম সহজ হয়।
আরো পড়ুনঃ বিয়ের প্রথম রাতের আমল ও সুন্নত-বাসর রাতের নিয়ম কানুন সম্পর্কে জেনে নিন
- ঘুমের মাধ্যমে
রাত জেগে থাকাটা হজমের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব সৃষ্টি করে বলে জানান পুষ্টিবিদরা। পুষ্টিবিদ সৈয়দা শারমিন আক্তার বলেন, রাতের বেলা এমনিতেই পরিবেশে অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকে। সেই সাথে রাতের বেলা ফুসফুসের বেশিরভাগ অংশ অব্যবহৃত থাকে।
যার কারণে পুরোপুরি শ্বাস নেয়া সম্ভব হয় না। আর জেগে থাকলে মানুষের সব ইন্দ্রিয় কাজ করে বলে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি হয় যা হজম প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে। এ কারণেই হজমশক্তিকে বাড়াতে হলে বা একে বেশি কর্মক্ষম করতে হলে রাতে ঘুমানো জরুরী বলে মনে করেন তিনি।
শেষ কথা
এই বিষয়ে যদি আপনি আরো জানতে চান তাহলে আমাদেরকে কমেন্ট করুন। আমাদের পোস্টটি আপনার কাছে ভালো লাগলে আমাদের পোস্টটি শেয়ার করুন।আজকে তাহলে এখানেই শেষ করা যাক। কথা হবে পরের কোন একটি নতুন আর্টিকেলে নিয়ে।ধন্যবাদ।২০৩
বন্ধুমহল আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url