স্তান ক্যান্সারের কি ? এর লক্ষণ এবং কেন হয়

প্রিয় পাঠক বৃন্দ স্তন ক্যানসার একটি মারাত্মক মরন ব্যাধি। প্রথম পর্যায়ে এই রোগ ধরা  ভালো হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশেই বেড়ে যায়।সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের নারীদের মধ্যে  স্তন ক্যানসার  শীর্ষস্থান দখল করে আছে। মাত্র দু-এক বছর পূর্বে জরায়ুর ক্যানসার প্রথম স্থানে অবস্থান করছিল।

স্তন ক্যান্সার কিঃ

প্রতিটি মানুষের স্তনের মধ্যে থাকা কোষগুলি যদি হঠাৎ করে নিয়ন্ত্রণের বাইরে বাড়তে থাকে, তখন এই ক্যান্সারের উৎপত্তি হয়। স্তনের মধ্যে থাকা বিভিন্ন কোষগুলির মপড়লে রোগীধ্যে যে কোন কোষেই এই রোগ হতে পারে।  প্রধানত মাতৃ দুগ্ধ উৎপাদনে যুক্ত কোষেই (milk ducts এর আস্তরণ-কারী কোষ ও lobules) এই প্রকার ক্যান্সার বেশি দেখা দেই । 

যে কারণে মহিলারাই এই রোগে বেশি আক্রান্ত হন। স্তনের ভেতরে থাকা বিভিন্ন  কোষগুলির অতিরিক্ত বেড়ে ওঠার কারণে শরীরে স্তনের আকার বা আকৃতির পরিবর্তন হয়। স্তনের ভেতরে মাংসল পিণ্ডের (lump) আকার অনুভূত হয়। তবে যে কোনো পিণ্ডের মত আকার স্তনের মধ্যে অনুভব হলেই যে ক্যান্সার হয়েছে এটা বলা যায় না। এটি  সাধারণ tumor ও হতে পারে। শুধু  ম্যালিগন্যান্ট tumor ই মারাত্মক ক্যান্সারের আকার নিয়ে থাকে। 

আরো পড়ুনঃপ্রতিদিন সহবাস করলে কি হয়-সহবাসের উপকারিতা ও অপকারিতা 

আর্টিকেলে সূচিপত্রঃ

আমাদের দেশে স্তন ক্যানসার নারীদের কাছে একটি আতংকের নাম। ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের স্তন ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে  বেশি।  নারীরা তাদের নিজেদের এই গোপন অঙ্গের রোগ গুলো সহজে অন্যের  কাছে বলতে চান না। যার ফলে তারা স্তন ক্যানসারের মতো জটিল রোগে প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হচ্ছেন ।

অধিকাংশ নারীরা নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন না। স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তবে যে সকল মায়েরা তাদের  সন্তানদের বুকের দুধ খাওয়ান না,তাদের  স্তন ক্যানসারে হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।আমাদের দেশে প্রতি বছর ১৫ হাজার নারী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। মারা যান প্রায় আট হাজারের মতো মানুষ। ৪০ বছরের পর আমাদের দেশের নারীদের স্তন ক্যান্সারে ঝুঁকি বাড়ছে ।

আরো পড়ুনঃ অতিরিক্ত চিন্তা দূর করার উপায়-টেনশন দূর করা ১২ টি সহজ উপায়

স্তন ক্যানসারের অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছেঃ

  • স্তন বা বগলে চাকা  দলা অনুভব করা
  • স্তনের ব্যথা  কিংবা কোথাও লালচে ভাব  
  • গুটি বা শক্ত অনুভব  করা  
  • স্তনে চাকা দেখা দেয়া
  • স্তনের  চামড়া মোটা হওয়া বা চামড়ার রং পরিবর্তন হওয়া 
  • স্তনের বোঁটা বা  নিপল  ভেতরে দিকে দেবে যাওয়া
  • স্তনের বোঁটা দিয়ে রক্তপুঁজ  বা রক্ত পড়া

স্তন ক্যান্সার কেন হয়ঃ

এখন পর্যন্ত চিকিৎসা বিজ্ঞান  স্তন ক্যান্সারের সম্পর্কে সঠিক কারণ জানাতে পারেনি । তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই ধরনের ক্যান্সারের দেখা অনুধাবন করা গেছে, যেমন - 

  • বয়স এবং লিঙ্গ ( ৪০ বছর) ঊর্ধ্ব মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার হবার প্রবণতা বেশি 
  • জেনেটিক্স বা বংশ-গত কারন 
  •  অতিরিক্ত ধূমপান এবং মদ্যপান
  • শরীরে মেদ-বাহুল্যতা 
  • তেজস্ক্রিয় বিকিরণ
  • হরমোন থেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
  • অনেক দেরিতে সন্তান নেওয়া
  • শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে অনীহা বা না পারা , (যেমন চাকরিজীবী মহিলাদের ক্ষেত্রে)

কত দিনে স্তন ক্যান্সার ছড়াইঃ

স্তন ক্যান্সারকে রোগের ক্ষতির অপর বিচার করে ০৫ টি ধাপে ভাগ করা যায় -

প্রায় প্রতি ১৮০ দিনে বা  প্রতি 6 মাসের মধ্যে স্তন ক্যান্সার এক পর্যায় হতে অন্য পর্যায়ে বাড়তে পারে। এই কারণে স্তনের আকার এবং গঠনের পরিবর্তন খুব ভাল করে লক্ষ্য করা উচিত। এতে  প্রথম অবস্থাতে  সতর্ক  হওয়া যায় এবং সঠিক চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয়।

ধাপ -১ঃ প্রথম ধাপে ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ গুলি আক্রমণাত্মক হয় না।যার ফলে স্তনের মধ্যে বা  শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পরতে পারে না।

ধাপ-২ঃএই ধাপে ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ গুলি  পার্শ্ববর্তী সুস্থ কোষগুলি কে আক্রমণ করা শুরু করে ।

ধাপ-৩ঃ এ সময় সাধারণত পিণ্ডের আকার  ২ সে.মি. এর থেকে ছোট থাকে এবংতা  বৃদ্ধি পেয়ে ৫ সে.মি. পর্যন্ত হতে পারে।

ধাপ-৪ঃ এই ধাপে ক্যান্সার আরো দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পরতে থাকে। লসিকা-বাহে সংক্রমণ ছড়াই  ও অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কোষ গুলোকে ক্যান্সারে আক্রান্ত করে। একে locally advanced breast cancer  বলে।

ধাপ-৫ঃ এটা শেষ পর্যায়  এবং রোগীর পক্ষ্যে সফল চিকিৎসার সুযোগ আর থাকে না। এই সময় ক্যান্সার হাড়, মস্তিষ্কে, ফুসফুস, লিভার এবং ফুসফুসও ছড়িয়ে পরতে পারে। যার ফলে রোগীর মৃত্যু সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি।

আরো পড়ুনঃ ১০০০ টাকার মধ্যে সেরা বাটন মোবাইল ফোন জেনে নিন বিস্তারিত

স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ঃ 

স্তন ক্যান্সার নির্নয় করার জন্য বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানে অনেক উন্নত পদ্ধতির আবিস্কার হয়েছে। 

ম্যামোগ্রাম ঃ

এই ধরনেরএক্স-রে বিকিরণ ব্যবহার করে স্তনের ছবি সাহায্যে স্তনের আকার এবং গঠনে অস্বাভাবিক পরিবর্তন সহজে লক্ষ্য করা হয় । এটাতে কোন প্রকার ক্ষত সৃষ্টি করে না এবং প্রাথমিক পর্যায়েই কান্সারের উপস্থিতি ধরা পরে।

আলট্রাসনোগ্রামঃ

এই পদ্বতিতে শব্দ তরঙ্গের মাধ্যমে স্তনের অভ্যন্তরের কোষ সমষ্টির ছবি তুলে পরীক্ষা করা হয়। এতে অস্বাভাবিক পরিবর্তন চোখে ধরা পড়ে। 

পি-ই-টি স্ক্যানঃ

এই ধরনের পরীক্ষা বিশেষ রঞ্জকের (dye) ব্যবহার করে ক্যান্সারে আক্রান্ত কোষ গুলির রঞ্জিত করা হয়। স্ক্যানের সময় এই বিশেষ ভাবে রঞ্জিত কোষগুলি খুব ভালোভাবে ধরা পরে। এই পরীক্ষায় ক্যান্সারের বৃদ্ধির হার বিশেষ ভাবে বুঝতে পারা যায়।

এম-আর-ইঃ

এই টেস্টে চুম্বকীয় এবং রেডিও তরঙ্গের সাহায্য কান্সার-আক্রান্ত কোষ গুলিকে নির্দিষ্ট করা  হয়।

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় মুড়ি খেলে কি হয়? মুড়ি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

স্তন ক্যান্সারের প্রতিকারঃ

স্তন ক্যান্সার সম্ভবনা এড়িয়ে যাওয়ার কিছু উপায় গুলি হোলো ---- 

  • মদ্যপান সীমাবদ্ধ করুন। অত্যাধিক  মদ্যপানের সাথে সাথে স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • যে কোন প্রকারের তামাক জাতীয় পদার্থের নেশা বন্ধ করুন। 
  • শরীরের ওজন নির্দিষ্ট মাত্রায় বা  স্তরে ধরে রাখুন। মেদ বাহুল্যতা বর্জন করুন।
  • প্রতিদিন নিয়মিত যোগ, ব্যায়াম ও শরীর চর্চার অভ্যাস করুন। 
  • শিশুকে নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ান এতে স্তন ক্যান্সারের সম্ভবনা হ্রাস পায়। 
  • পোস্টমেনোপজাল হরমোন থেরাপি সীমিত রাখার চেষ্টা করতে হবে।

স্তন ক্যান্সারে কি কি  খাবার খাওয়া উচিতঃ

  • বেশি বেশি তাজা শাক-সবজি এবং ফল খেতে হবে। 
  • সুষম খাবার খেতে হবে ।
  • সারাদিনে প্রচুর পানি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন । কমপক্ষে ৩-৪ লিটার। 
  • ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়ামের যুক্ত খাবার গ্রহণ করুন। প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন।
  • প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি খেতে হবে ।
  • সুগার বা চিনি পরিহার করতে হবে ।

শেষ কথাঃ

যদিও ৪০ বছরের বেশি বয়স্ক মহিলাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি কিন্তু যেকোনো বয়সেই এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভব থাকে। তাই নিয়মিত ঘরোয়া পদ্ধতির সাহায্যে নিজের শরীরে স্তন ক্যান্সারএর লক্ষণ গুলি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যে কোনো একটি উপসর্গ দীর্ঘ দিনের জন্য (১০ থেকে ১৫ দিন) দেখা দিলে অতি অবশ্যই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। আপনার পরিচিতদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের সম্মন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করুন।২০৩

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বন্ধুমহল আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url