আমলকির উপকারিতা , পুষ্টিগুণ এবং খাবার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন
আমলকি প্রায় দেশে সর্বত্রই দেখা যায়। এই ফলটি সবার কাছে ওষুধি ফল হিসেবে প্রায় পরিচিত। ফলটিতে রয়েছে অধিক পরিমাণে ভিটামিন সি। আর তাই আমলকিকে বলা হয় ভিটামিন সি এর রাজা। দেখি ওষুধ ও প্রসাধনী সামগ্রীতে আমলকি ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে । ভিটামিন সি এর অভাবে যে সমস্ত রোগ হয় আমলকি খেলে তার জাদুকারি উপকার পাওয়া যায়।
সূচিপত্রটি দেখে নিন
আমলকির পুষ্টিগুণঃ
খাদ্য উপযোগী প্রতি 100 গ্রাম আমলকিতে রয়েছে শর্করা ১৬.২ গ্রাম, ভিটামিন সি ৪৬৩ মিলিগ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.৭ গ্রাম, আঁশ ৩.৪ গ্রাম, খাদ্য শক্তি ৭০ কিলো ক্যালরি,লৌহ ৩.১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১ ০.০৩ মিলিগ্রাম।
আরো পড়ুনঃ অতিরিক্ত চিন্তা দূর করার উপায়-টেনশন দূর করা ১২ টি সহজ উপায়
আমলকির উপকারিতাঃ
ওজন নিয়ন্ত্রণঃ আধুনিক গবেষণায় আমলকির ফ্যাট কমানোর বেশ কিছু প্রমান পাওয়া গেছে। জানা গিয়েছে যে ফ্যাট সঙ্গে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে এই আমলকি। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং ফাইবার। আমলকি কিভাবে ওজন কমায় সেটা জানার আগে আমাদের জানতে হবে ওজন কিভাবে বাড়ে।
ওজন বৃদ্ধির পেছনে মূলত তিনটি কারণ থাকে। লো মেটাবলিক রেট, ফ্রি রেডিক্যালস, অসংযমী জীবনযাত্রা। আমলকি দেহের মেটাবলিক রেট বাড়িয়ে ওজন বৃদ্ধি রোধ করে। আর আমলকিতে থাকে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট এগুলি ফ্রি রেডিক্যালস ধ্বংস করে ।
অসংযমী জীবনযাত্রার মধ্যে অনেকেই প্রচুর পরিমাণে খাবার গ্রহণ করে ফেলে কিন্তু একদমই শরীরচর্চা করেন না। এক্ষেত্রে প্রথমে খাদ্য গ্রহণ পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে সে ক্ষেত্রে আমলকির রস বেশি উপকারী। খাবার খাওয়ার আগে ৫ থেকে ১০ মিলি গ্রাম আমলকি রস বেশ উপকারী ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণ হয়।
চুলের বৃদ্ধি ঘটায়ঃ আমলকিতে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়ার ও এন্টিফাঙ্গাল
গুনাগুন থাকায়, খুশকি, অকালে চুল পড়া চুলের ডগা ফাটা ইত্যাদি
প্রতিরোধ হয়। আমলকি মিশ্রিত তেল চুলের জন্য অমৃত সমান। পরিমাণ মতো
নারিকেলের তেলের সাথে শুকনো আমলকি হালকা আছে গরম করুন এরপর তেল ছেঁকে নিয়ে
ঠান্ডা করে চুলে নিয়মিত ব্যবহার করুন। এই তেল চুলের বৃদ্ধি ঘটায় এবং
চুল কালো রাখতে সহায়তা করে।
আরো পড়ুনঃ গর্ভধারণ ছাড়া মাসিক দেরিতে হয় কেন-অনিয়মিত মাসিক কেন হয় জেনে নিন
বয়স ধরে রাখেঃ আমলকির মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
তাই প্রতিদিন একটি করে আমলকি খেলে সার্বিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে। আর সার্বিক
সুস্থতা বজায় থাকলে বয়স ধরে রাখা সম্ভব। তাই সারা বছর আমলকি খাবার চেষ্টা করুন।
টক স্বাদের জন্য খেতে অসুবিধা হলে ভাতের সাথে সেদ্ধ করে নিন। এরপর সিদ্ধ করা
আমলকি ভাতের সঙ্গে মাখিয়ে খেয়ে নিতে পারেন।
অ্যানিমিয়া দূর করেঃ আমলকি রসের মধ্যে উপস্থিত থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। যা আমাদের গৃহীত খাদ্য দ্রব্যের আয়রন শোষণে সহায়তা করে। ফলে খাবার পর আমলকি খেলে লৌহ বা আয়রন জনিত ঘাটতি অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা দূর করে।
একটি কথা মনে রাখবে অ্যানিমিয়া খুব বেশি দিন ধরে চলতে থাকলে হৃদ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এছাড়াও সামান্য কাজে হাপিয়ে যাওয়া, শরীর দুর্বল হওয়ার এক্ষেত্রে আমলকি অত্যন্ত উপকারী।
আরো পড়ুনঃ ছেলেদের ছোলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখেঃ আমলকি দেহের কিছু প্রোটিন জাতীয় উপাদান উৎপাদনে রোধ করে। যা অ্যাথেরোক্লোরোসিস এবং হৃদ রোগের কারণ। হৃদ রোগীদের রক্তে সুগার ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে আমলকি বেশি উপকারী।
যে সমস্ত ভেষজ উপাদান ক্ষতিকর LDL কোলেস্টেরল কমায় এবং একই সঙ্গে শরীরের পক্ষে উপকারী HDL কোলেস্টেরল বাড়াই তার মধ্যে আমলকি অন্যতম। এটি অ্যাথেরোক্লোরোটিস প্লাগক জমতে বাধা দেয় এবং শরীরের রক্ত সঞ্চালন ভালো রাখ।
লিভারের টক্সিন দূর করেঃ প্রতিদিন দুবেলা ভাত খাবার পর মাঝারি আকারের একটি
করে আমলকি চাবিয়ে খান লিভার থেকে টক্সিন ধীরে ধীরে দূর হবে। কোষ্ঠকাঠিন্য
দূর হবে ও রক্তস্বল্পতাও দূর হবে। এক্ষেত্রে আরেকটি কথা বলে রাখি কাঁচা
আমলকি না পেলে শুকনো আমলকি ভিজিয়ে পানি খেতে পারেন।
সুগার নিয়ন্ত্রণ রাখে ঃ আমলকির চূর্ণও হলুদ চূর্ণ সমানভাবে নিয়ে মিশিয়ে রাখুন এবং সকালে খালি পেটে ও রাতে খাবার ৩০ মিনিট আগে দুই থেকে তিন গ্রাম মাত্রায় সেবন করুন। সুগারের জন্য যেসব ওষুধ খাচ্ছেন তা কিন্তু হঠাৎ করে বাদ দিবেন না।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় মুড়ি খেলে কি হয়? মুড়ি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
এই মিশ্রণটি সেবন করতে করতে যখন সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আসবে তখন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ধীরে ধীরে ওষুধ বন্ধ করে দিতে হবে।এছাড়াও আমলকির অনেক উপকারিতা রয়েছে। নিয়মিত আমলকি খেলে এর উপকারিতা অবশ্যই পাবেন।
নিঃশ্বাসের গন্ধ দূরঃ প্রতিদিন আমলকির রস খেলে নিঃশ্বাসের গন্ধ দূর হয়
এবং দাঁত শক্ত থাকে।
খাবার রুচি বাড়ায়ঃ আমলকির টক ও তেতো মুখে রুচি ও সাত বাড়াই। রুচি বৃদ্ধি ও খিদে বাড়ানোর জন্য আমলকির গোড়ার সঙ্গে সামান্য মধু ও মাখন মিশিয়ে খাবার আগে খেতে পারেন।আমলকি শরীর ঠান্ডা রাখে, শরীরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং পেশি শক্ত করে।
আমলকি খাবার নিয়মঃ
এখন আমরা জানবো আমলকি কিভাবে খাবেন বা কতটুকু খাবেন। একজন মানুষের আমলকি সারাদিনে
কতটুকু প্রয়োজন সেটি তার চাহিদার উপর নির্ভর করে। সাধারণভাবে দুই থেকে
তিনটি ফল সারাদিনে খাওয়া যায়। যারা অনেক রকম শাকসবজিও ফলমূল মিশিয়ে খান তাদের
জন্য একটি ফলই যথেষ্ট। টাটকা ফল ধুয়ে সরাসরি খাওয়াই বেশি উপকার।
আরো পড়ুনঃ নিপা ভাইরাস কি? নিপা ভাইরাস কেন হয়? নিপা ভাইরাসের লক্ষণ ও নিপা ভাইরাসের প্রতিকার
আমলকি রসের বদলে এটি ফল হিসাবে চিবিয়ে খেলে এর ফাইবার শরীরে যুক্ত
হয়। যা শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে আর সুগারে রোগীদের
ক্ষেত্রে যে কোন ফল চিবিয়ে খাই বেশি পুষ্টিকর। তাই বর্তমান সময়ে সুস্থ
থাকতে হলে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে অবশ্যই আমলকি খেতে হবে।
শেষ কথাঃ
এ বিষয়ে যদি আপনি আরো জানতে চান তাহলে আমাদেরকে কমেন্ট করুন। আমাদের পোস্টটি আপনার কাছে ভালো লাগলে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন। তাহলে আজকে তাহলে এখানেই শেষ করা যাক। কথা হবে পরের কোন একটি নতুন আর্টিকেলে নিয়ে ধন্যব।২০৩
বন্ধুমহল আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url