লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং লেবুর গুনাগুন সম্পর্কে জানুন
লেবুর অনেক গুণাগুণ রয়েছে। আমরা সকলেই জানি যে লেবুতে রয়েছে সাইট্রিক এসিড যা আমাদের দেহের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। আবার অনেক রোগ থেকে রক্ষা করে সেই সাথে লেবু আমাদের শারীরিক ওজন কমাতেও ব্যাপক ভূমিকা রাখে তাহলে চলুন এবার লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং লেবুর গুনাগুন সম্পর্কে জানব।
পোষ্ট সূচিপত্রঃ এক নজরে দেখে নিন
- লেবু খাওয়ার উপকারিতা
- লেবু খাওয়ার অপকারিতা
- লেবু খাওয়ার নিয়ম/লেবু কখন খাবেন ও কিভাবে খাবেন
- রাতে গরম পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা
- গরম পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা
- ঠান্ডা পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা
- খালি পেটে লেবু খাওয়ার অপকারিতা
- লেবু পানি কখন খাওয়া উচিত
- ত্বকে লেবুর উপকারিতা
- ত্বকে লেবুর অপকারিতা
- বাতাবি লেবু কেন খাবেন, কারা খাবেন ও তার উপকারিতা
- কমলা লেবুর উপকারিতা
- চুলের জন্য লেবুর উপকারিতা
- ওজন কমাতে লেবুর উপকারিতা
- অতিরিক্ত লেবু খাওয়ার ক্ষতিকর দিক
- লেবু বিষয়ে শেষ কথা
লেবু খাওয়ার উপকারিতা
লেবু খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। লেবুর মধ্যে ভিটামিন সি রয়েছে, লেবু একটি সাইট্রিক এসিড জাতীয় ফল। তার মধ্যে লেবুতে যে উপকারিতা রয়েছে সেগুলো নিচে দেওয়া হলঃ
- লেবুতে হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ আমাদের দেহে যে পরিমাণে টক্সিন রয়েছে তা লেবু পানি অতি সহজেই দূর করে ফেলে। বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা দূর করে।
- দ্রুত ক্ষত সারায়ঃ লেবুর মধ্যে এক ধরনের এসিড রয়েছে যার নাম অ্যাবসরবিক এসিড যা আমাদের শরীরের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে।
- লেবু আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ লেবুর মধ্যে থাকা ভিটামিন সি আমাদের সর্দি কাশির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
- লেবু ত্বকের দাগ মুক্ত রাখেঃ লেবুতে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের বিভিন্ন দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
- লেবু দ্রুত ওজন কমায়ঃ সকালে উঠে লেবু দিয়ে গরম পানি খেলে আপনার দেহে পেকটিন ফাইবার খিদে কমাতে সাহায্য করে,ও দ্রুত ওজন কমায়।
লেবু খাওয়ার অপকারিতা
আমরা অনেক সময় ওজন কমানোর উদ্দেশ্যে খাওয়া দাওয়া কমিয়ে দিয়ে অধিক পরিমাণে লেবুর রস পান করে থাকি এতে করে আমাদের শরীরে কার্বোহাইড্রেট এর অভাব অভাব দেখা দেয় এবং শরীরে ক্লান্তি আসে।
অধিক পরিমাণে লেবুর রস খাওয়ার ফলে আমাদের গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয় ফলে আমাদের পেট ফাঁপে এবং অস্বস্তি বোধ হয়।
আরো পড়ুনঃ চা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
অধিক পরিমাণে লেবুর রস সেবনে আমাদের তলপেটে ব্যথা ও গলায় জ্বালাপোড়া ভাব দেখা দেয়।
অতিরিক্ত লেবু খেলে আমাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সহ বমি বমি ভাব হতে পারে।
আমরা যারা ক্যালসিয়াম জাতীয় ঔষধ খাই তাদের অতিরিক্ত লেবুর রস না খাওয়া ভালো। কেননা এতে আমাদের ঐসকল ওষুধের ক্যালসিয়াম গুনাগুন নষ্ট করে ফেলে।
লেবু খাওয়ার নিয়ম/লেবু কখন খাবেন ও কিভাবে খাবেন
আপনাদের সকলের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে লেবু খাওয়ার নিয়ম আবার কি? লেবু খাওয়ার কি কোন নিয়ম রয়েছে? হ্যাঁ লেবু খাওয়ার নিয়ম রয়েছে চলুন জেনে নিই।
- প্রতিদিন সকাল বেলায় খালি পেটে লেবু ও মধু পানি খেতে পারে এতে আপনার শরীরের ওজন কমবে
- আবার আপনি যখন ভাত খেতে বসবেন তখন লেবুর রস খাবেন কেননা বিভিন্ন গবেষকরা বলেছেন যে ভাতের সাথে লেবু খেলে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।
- আবার যারা পেটের সমস্যা নিয়ে ভুগছেন তারা প্রতিদিন সকালে গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে পারেন। কারণ লেবুর রস পান করলে আপনার পেটের সমস্যা দূর হবে সেই সাথে আপনার দেহের দূষিত পদার্থ গুলো টক্সিন ও বেরিয়ে যায়।
- প্রতিদিন সকাল-বিকাল লেবু পানি পান করলে লেবুতে থাকা পটাশিয়াম আপনার শরীরের উচ্চরক্তচাপকে স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে
রাতে গরম পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা
রাতে কুসুম গরম লেবু পানি খেলে মানসিক চাপ কমে ও শরীরকে আরাম প্রদান করে এবং রাতে ভালো ঘুম হয়।
তবে রাতে লেবু পানি খেয়ে ঘুমালে মূত্র ত্যাগের চাপ সৃষ্টি হতে পারে। তবে যাদের বুক জ্বালাপোড়া করার অভ্যাস আছে তাদের রাতে লেবু পানি না খাওয়াই উত্তম।
আরো পড়ুনঃ ঘি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
রাতে কুসুম গরম লেবু পানি খেয়ে শুয়ে গেলে তা সারারাত ধরে আপনার শরীরে কাজ করে এবং সারা দিনের ক্লান্তির ঘাটতি পূরণ করে
আবার আপনি যদি রাতের বেলায় লেবু পানি খেতে পছন্দ করেন তাহলে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস কুসুম গরম লেবু পানি খেলে আপনার মেদ বা বাড়তি চর্বি গুলো কি কাটিয়ে দেয়।
গরম পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা
- হালকা গরম পানিতে লেবু খেলে আপনার গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
- আবার গরম পানির সাথে লেবু মিক্স করে খেলে আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি করে তুলবে।
- হালকা কুসুম গরম পানিতে লেবু খেলে আপনার দেহের টক্সিন বের করে দেয় সেই সাথে আপনার লিভার কে ভালো রাখে।
- প্রতিদিন হালকা গরম পানিতে লেবু খেলে দ্রুত আপনার ওজন কমবে।
ঠান্ডা পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা
আপনার যদি বদহজম হয় তাহলে আপনি ঠান্ডা পানিতে একটি লেবুর রস মিশিয়ে নিয়ে তার মধ্যে হালকা লবন দিয়ে খেয়ে নিতে পারেন তাহলে আপনার বদহজমের সমস্যাটি হবেনা।
আপনি প্রত্যেকদিন ঠান্ডা পানিতে লেবু মিক্সড করে খেলে আপনার শরীরে যদি পয়ঃনিষ্কাশনের সমস্যা থাকে তাহলে আপনি ঠান্ডা পানিতে লেবু খেতে পারেন।
খালি পেটে লেবু খাওয়ার অপকারিতা
- নিয়মিত খালি পেটে লেবু খেলে আপনার শরীরে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে
- দৈনিক খালি পেটে লেবু খেলে হজমের সমস্যা দেখা যেতে পারে
- প্রতিদিন খালি পেটে লেবু খেলে দাঁত ও হাড়ের সমস্যা দেখা যায়
- আবার খালি পেটে লেবু খেলে শরীরের মধ্যে আয়রন এর মাত্রা বেড়ে যায়
- আবার খালি পেটে লেবু খেলে ওজন কমার সাথে সাথে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়
লেবু পানি কখন খাওয়া উচিত
লেবুর পানিতে যেহেতু পটাশিয়াম রয়েছে সেহেতু আপনাকে দিনের শুরুতেই লেবু পানি খাওয়া উচিত কারণ আপনার দেহের ঘাটতি পূরণ করতে লেবুর পটাশিয়াম অধিক কার্যকরী।
আবার আপনি যদি ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস হালকা কুসুম গরম পানিতে একটি পুরো লেবুর রস মিক্সড করে নেন এবং তা সেবন করুন দেখবেন আপনার শরীরকে আর ক্লান্তি ভাব মনে হবে না।
এবং সেইসাথে আপনার শরীরের দূষিত পদার্থ নিষ্কাশন হয়ে যাবে এবং শরীরকে আরো আরামদায়ক মনে হবে।
ত্বকে লেবুর উপকারিতা
আমরা প্রথমেই একটি লেবুর অর্ধেক অংশ কেটে নিন এবং পরবর্তীতে সেই কেটে নেওয়া অংশের রস বের করে নিন এবার তার সাথে কিছু পরিমাণ মধু মিশিয়ে নিন তারপরে সেটি আমাদের মুখে মেখে নেই আর কিছুক্ষণ পরে এবার ধুয়ে ফেলি। মধুতে আপনার ত্বক উজ্জ্বল রাখবে এবং লেবুতে আপনার ত্বককে ফর্সা করবে।\
আপনার ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে লেবুর রস শসা মিক্স করে মুখে মেখে নিন তারপরে আপনি দেখবেন আপনার মুখের তৈলাক্ত ভাব চলে গেছে।
আপনার হাত ও পা যদি রুক্ষতা দেখায় তাহলে কিছু পরিমাণ চালের গুঁড়া একটি লেবুর সঙ্গে মিশিয়ে গোটা শরীরে মেখে নিন। কিছুক্ষণ পরে লক্ষ্য করুন আপনার ত্বক আগের থেকে কোমল মনে হবে।
ত্বকে লেবুর অপকারিতা
লেবুর রস আমাদের ত্বকের জন্য উপকারী আমরা এটা সবাই জানি কিন্তু এটা জানি না যে সরাসরি লেবুর রস আমাদের ত্বকে মাখানো যাবে না যদি তা করি তাহলে আমাদের ত্বক পুড়ে যেতে পারে।
লেবুর অনেক গুণাগুণ রয়েছে তবে এটি ত্বকের পিএইচ এর মাত্রা ক্ষতিগ্রস্থ করে তাই ত্বকে লেবুর রস না মাখালেই ভালো।
বাতাবি লেবু কেন খাবেন, কারা খাবেন ও তার উপকারিতা
- বাতাবি লেবু খেলে যাদের ব্লাড প্রেসার আছে তা কন্ট্রোল করে
- যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের জন্য বাতাবি লেবু বেশি উপকারী
- আবার বাতাবি লেবু আমাদের শারীরিক ওজন কমাতে সহায়তা করে
- বাতাবি লেবু আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে
- বাতাবি লেবু আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
কমলা লেবুর উপকারিতা
প্রতিনিয়ত কমলালেবু সেবন করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও ছোট-বড় কোনো রোগ ই ধারের কাছে ঘেষতে পারে না।
কমলা লেবুতে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
আরো পড়ুনঃ কাঁঠালের বিচি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
কমলা লেবু ভিটামিন এ ভিটামিন সি পটাশিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি ফল। তাই এই ফলটি নিয়মিত খেলে চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে।
কমলালেবু সেবনের ফলে রক্ত জমে থাকা চর্বি গুলো গ্রাস পায় এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কম থাকে।
চুলের জন্য লেবুর উপকারিতা
চুল বাড়াতে সহায়তা করে লেবু নারিকেল তেল, জলপাই তেল ও লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে মাথায় লাগান ঝলমলে ভাব বাড়ার পাশাপাশি চুল বাড়বে।
লেবুর রস ও জলপাই তেল একসাথে মিশিয়ে চুলে লাগান এভাবে নিয়মিত লাগাবেন যদি নিয়মিত না পারেন তাহলে কয়েক সপ্তাহ পর একবার লাগাবেন আপনার চুলের আগা ফাটা বন্ধ হয়ে যাবে।
চুল পড়া কমাতে লেবুর রস অত্যন্ত কার্যকরী উপাদান
ওজন কমাতে লেবুর উপকারিতা
সকাল বেলা খালি পেটে এক গ্লাস পানি নিবেন এবং সেইসাথে একটি গোটা লেবু কেটে দিবেন পুরো লেবু টি এবার গ্লাসের ভিতরে রস গুলো নিয়ে নিন। এবার হালকা কুসুম গরম পানি দিন আপনার যদি সম্ভব হয় তাহলে লেবু পানির সাথে সাথে একটু মধু মিশিয়ে নিন।
এবার আপনি তা সেবন করতে পারেন এভাবে কিছুদিন সেবন করার ফলেই আপনি দেখতে পাবেন আপনার শরীরের ভেতর অন্যরকম পরিবর্তন হয়ে গেছে বা আপনার ফ্যাট গুলো কে গলিয়ে আপনার ওজন কমে গেছে।
অতিরিক্ত লেবু খাওয়ার ক্ষতিকর দিক
- অতিরিক্ত লেবু খাওয়ার ফলে লেবুর সাইট্রাস মাইগ্রেন বাড়ায় তাই যাঁদের মাইগ্রেনের সমস্যা আছে তাদের লেবুর রস না খাওয়াই ভালো।
- অতিরিক্ত লেবু খেলে ত্বকে কালো ছোপ ও দেখা দিতে পারে।
- অতিরিক্ত লেবু খেলে আপনার শরীরের মধ্যে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার বাসা বাঁধতে পারে ।
- আবার অতিরিক্ত লেবু খাওয়ার ফলে আপনার বমি বমি ভাব হতে পারে।
- অতিরিক্ত লেবু খেলে হজম শক্তি বা বিপাক ক্রিয়ায় বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
লেবু বিষয়ে শেষ কথা
সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ আপনারা এই পোস্ট থেকে যা জানলেনা বুঝলেন তাহলও লেবু খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা, লেবু দিয়ে কিভাবে ওজন কমানো যায়, আর লেবু দিয়ে কিভাবে ত্বকের যত্ন নেয়া যায়।
আজকের এই পোষ্ট আপনাদের জন্য। আজকের এই পোস্ট টি পড়ে আপনারা সকলে উপকৃত হবেন। আশা করি আজকের এই পোস্টটি সকলের ভাল লাগবে।
যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই এই পোষ্ট টি আপনারা আপনাদের বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন এবং লেবু বিষয়ে আপনাদের আর কিছু জানার থাকলে নিচের কমেন্ট বক্সে গিয়ে আমাকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।
বন্ধুমহল আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url