জানাজার নামাজের সঠিক নিয়ম গুলো জেনে নিন
আসসালামুয়ালিকুম প্রিয় পাঠক, এতদিন আমরা আমাদের আত্মীয় স্বজন মারা গেলে আমরা তাদের জানাজা করে থাকি বিশেষ করে কোন মৌলভী বা মাওলানা মাধ্যমে। কিন্তু একজন মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার জানাজা তার পরিবারের মধ্য থেকে কোন একজনের দ্বারা আদায় করা উত্তম। তাই আজকের এই পোস্টটি আপনাদের জানাজার নামাজের নিয়ম গুলি জানানো হবে এবং তা জানতে হলে আপনাকে সম্পূর্ণ পোস্ট মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ এক নজরে দেখে নিন।
- জানাজা অর্থ কি
- জানাযার নিয়ত / জানাজার নামাজের বাংলা নিয়ত
- জানাযার নামাজের নিয়ম / জানাজার নামাজের ইমামতির নিয়ম/জানাজার নামাজের নিয়ম হানাফি
- জানাযার দোয়া আরবি
- জানাজার নামাজের দোয়া বাংলা অর্থ সহ
- জানাজার নামাজের ফজিলত
- জানাজার নামাজের ইতিহাস
- জানাজার নামাজের শর্ত কয়টি
- জানাজা থেকে শিক্ষা
- জানাজার নামাজের ফরজ ও সুন্নাত
- মন্তব্য
জানাজা অর্থ কিঃ
জানাজা শব্দের অর্থ হলো মৃত ব্যক্তির মৃতদেহ
জানাযার নিয়ত / জানাজার নামাজের বাংলা নিয়তঃ
জানাযার নামাজের নিয়ম / জানাজার নামাজের ইমামতির নিয়ম/জানাজার নামাজের নিয়ম হানাফিঃ
আমাদের আত্মীয় স্বজন মৃত্যুবরণ করলে আমরা ইমামের কাছে ছুটে যাই জানাজা পড়ানোর জন্য। কিন্তু সেই দায়িত্বটা একান্তই মৃতব্যক্তির পরিবার-পরিজনদের যেকোনো একজনের মাধ্যমে জানাজা পড়ান। এবং আমরা যে নিয়মে জানাযা সম্পন্ন করি তা হল হানাফি নিয়ম অনুসারে। নিয়মগুলো নিচে উল্লেখিত রয়েছে।
প্রথমে মনে মনে নিয়ত করতে হবে
তারপর ৪ তাকবীর দিতে হবে,
প্রথম তাকবীরঃ আল্লাহু আকবার বলে প্রথমে সানা পড়তে হবে-
সানাঃ সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়াবিহামদিকা, ওয়াতাবারা কাসমুকা, ওয়া তায়ালা জাদ্দুকা, ওয়া জাল্লাচ্ছানাউকা, ওয়া লা-ইলাহা গাইরুক।
দ্বিতীয় তাকবীরঃ আল্লাহু আকবার বলে দুরুদ শরীফ পাঠ করা।
দরুদ শরীফঃ আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়ালাআলী মুহাম্মাদ কামা সাল্লাইতাআলা ইব্রাহীম ওয়ালাআলী ইব্রাহীম ইন্নাকা হামিদুমমাজিদ,আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়ালা আলী মুহাম্মদ কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীম ওয়ালা আলী ইব্রাহীম ইন্নাকা হামিদুমমাজিদ।
তৃতীয় তাকবীরঃ আল্লাহু আকবার বলে মাইয়াতের জন্য দোয়া করা
চতুর্থ তাকবীরঃ আল্লাহু আকবার বলে ডানদিকে না বামদিকে সালাম ফিরিয়ে
জানাজার নামাজ শেষ করা।
জানাযার দোয়া আরবিঃ
জানাজার নামাজের দোয়া বাংলা অর্থ সহঃ
দোয়াঃ আল্লাহুম্মাগফিরলী হাইয়্যিনা ওয়া মায়্যিতিনা ওয়া সাহিদিনা
ওয়া গয়িবিনা ওয়া সাগিরিনা ওয়া কাবিরিনা ওয়া জাকারিনা ওয়া উংসানা আল্লাহুম্মা মান
আহইয়াইতাহু মিন্না ফা-আহয়িহী আলাল ইসলাম। ওয়া আম্মামান তাআফফাইতাহু মিন্না
ফাতাওয়াফফাহু আলাল ইমান বি রহমাতিকা ইয়া আর হামার রাহিমীন।
অর্থঃ হে আল্লাহ আমাদের মধ্যে জীবিত এবং মৃত উপস্থিত উপস্থিত ছোট-বড় পুরুষ ও নারী সকলকে ক্ষমা করুন এবং যাদেরকে আপনি বাঁচিয়ে রাখবেন তাদেরকে আপনি ইসলামের উপরে দৃঢ় প্রত্যয় সাথে বাঁচিয়ে রাখুন এবং যাকে মারতে চান তাকে ইমনের ওপরে সক্রিয়তার সাথে মৃত্যুবরণ করায়েন এবং এই মাইয়াতের উত্তম প্রতিদান মুহূর্তে আমাদের বঞ্চিত করবেন না এবং আমাদের কোন পরীক্ষায় ফেলেন না।
জানাজার নামাজের ফজিলতঃ
জানাজার নামাজের বেশকিছু ফজিলত রয়েছে কি সেই ফজিলত,
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু সাল্লাম এরশাদ করেছেন যে ব্যক্তি জানাজার নামাজ সম্পন্ন করল সে ব্যক্তি এক কিরাত পরিমাণ সওয়াব লাভ করল এবং যে ব্যাক্তি জানাজার নামাজ সহ দাফন কাজ সম্পন্ন করল সে ব্যাক্তি দুই কিরাত পরিমাণ লাভ করল। তখন কোনো এক সাহাবী জিজ্ঞেস করল হে আল্লাহর রাসূল কিরাত পরিমাণ কথাটি বলতে কী বোঝায় জবাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বললেন এক কিরাত সমান একটি ওহুদ পাহাড় সমান আর দুই কিরাত সমান দুইটি ওহুদ পাহাড় সমান।
আরো পড়ুনঃ অনলাইনে হালাল ইনকামের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত
হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম যখন কোন ব্যক্তির দাফন কার্য সম্পন্ন করতেন তখন কবরের পাশে দাঁড়িয়ে সকলকে বলতেন তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য দোয়া করো কেননা এখনই তার কবরের প্রশ্ন করা শুরু হয়ে যাবে। আল্লাহর কাছে দোয়া করো যেন তিনি তাকে ঈমানের প্রতি দৃড় অবিচল রাখে। (আবু দাউদ হাদিস নংঃ৩২২১)
জানাজার নামাজের ইতিহাসঃ
আমাদের আত্মীয় স্বজন মৃত্যু বরণ করলে কেবল আমরা তাদেরকে জানাজা করে আসি কবরস্থ করে আসি। কিন্তু আদৌ আমরা জানিনা যে এই জানাজাটি মূলত কোথা হতে এসেছে। তাহলে চলুন এবার জানাযা নামাজের ইতিহাস সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আ.) হতে শুরু হয় জানাজার নামাজ। এবং তার জানাজা পড়ান সর্বপ্রথম একজন ফেরেশতা এবং তার শুধু জানাজায় নয় বরং তার দাফন কাপন সম্পন্ন করেন একজন ফেরেশতা। এবং হযরত আদম (আ.) এর মৃত্যুর পর একজন ফেরেশতা সমস্ত কাজকর্ম করেছিলেন।
আরো পড়ুনঃ কিভাবে দ্রুত ধনী হওয়া যায় বিস্তারিত জানুন
এবং দাফন কাপন সম্পন্ন করার পরে আদম সন্তানদের লক্ষ করে তিনি বলেন হে বনী-আদম আজ থেকে এটা তোমাদের জন্য বিধান। আর এই বিধান অনুসরণ করেই তোমরা তোমাদের আদম সন্তানদের জানাজা দিবে। আর সেইসময় হতেই আমরা আমাদের আত্মীয় স্বজন এবং পরিচিতজনদের জানাজা দিয়ে থাকি।
জানাজার নামাজের শর্ত কয়টিঃ
জানাজার নামাজের শর্ত মোট তিনটি ।যথাঃ
- মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানো
- কাফন পরানো
- মৃত ব্যক্তির জানাজা
জানাজা থেকে শিক্ষাঃ
আমরা মৃত ব্যক্তির জানাযা থেকে যা শিক্ষা পায় তা হল একজন ব্যক্তি যখন মারা যায় তখন সে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে দুনিয়া থেকে চলে যায় ঠিক একইভাবে আমাদের কেউ যেতে হবে তাই আমাদেরকে এখন থেকে আখেরাতের প্রস্তুতি নিতে হবে আখেরাতের। আখেরাতে সর্বপ্রথম হিসাব নেওয়া হবে নামাজের।
আরো পড়ুনঃ হালাল ইনকামের উপায়
তাই আমাদেরকে পর্যায়ক্রমে সকলকেই এ দুনিয়া থেকে যেতে হবে তাই এই দুনিয়াতে আমরা যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণ আল্লাহর ইবাদত বন্দেগিতে আমাদেরকে সময় ব্যয় করতে হবে। মানুষের ব্যস্ততা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শেষ হবে না তাই এই ব্যস্ততার মধ্যে আমাদের আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী করতে হবে।
বিশেষ করে আমরা জানাজা থেকে যে শিক্ষা পায় তা হল আমাদের প্রিয় জন আপনজন আমাদের কাছ থেকে যেমন চলে যাচ্ছে ঠিক একইভাবে আমাদের কেউ যেতে হবে তাই আমাদেরকে এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে আখেরাতের মালসামান গোছানোর জন্য।
জানাজার নামাজের ফরজ ও সুন্নাতঃ
জানাজার নামাজের ফরজ ২টি
- চার বার আল্লাহু আকবার ধ্বনি দেওয়া বা তাকবীর দেওয়া। প্রতি একেকটি তাকবীরে প্রতি এক রাকাতে স্থলাভিষিক্ত হবে তবে এই জানাজাতে রুকু সিজদা নেই।
- আবার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে জানাযার নামাজ আদায় করতে হবে। কোন প্রকার ওযর ছাড়া বসে নামাজ পড়া বৈধ নয়।
জানাযার নামাজের সুন্নত ৪টি
- প্রথমে সানা পাঠ করা
- রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু সাল্লাম এর প্রতি দরুদ পাঠ করা
- মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা
- জানাজা নামাজ বিজোড় করে পড়া ন্যূনতম 3 কাতার করা। যদি এর থেকেও বেশি হয় তাহলেও বেজোড় করেই নামাজ পড়া উত্তম।
মন্তব্যঃ
সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ আজকে আপনাদের সামনে জানাজার নামাজের বিভিন্ন বিষয়াদি সম্পর্কে আলোচনা করেছি যদি আমার এই পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনাদের বন্ধু-বান্ধবের মাঝে শেয়ার করে দিন এবং এমন আরো নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের পাশে থাকুন আমার এই পোস্টের মধ্যে আরো কোন বিষয়ে জানার থাকলে আমাকে জানানোর থাকলে নিচে কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করে জানাতে পারেন এতক্ষণ সময় নিয়ে আমার এই পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
বন্ধুমহল আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url